শামিম এবার তুই শুরু কর
গল্প শুরুর আগেই শামিম কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। আমি তােদেরকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। তােরা যাবি আমার সাথে? আমরা সবাই হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। শামিম আড্ডা ছেড়ে উঠে বলল চল আমার সাথে। আমরা বেশ কৌতূহলী। আমাদের মধ্যে শামিম খুবই কম কথা বলে। আমরা তাকে সাইন্টিস্ট শামিম বলে ডাকি। নিশ্চই কোনাে সিরিয়াস বিষয় রয়েছে। আমাদের কৌতূহল ক্রমান্বয়ে বাড়তে লাগল। টিএসসির চত্বর থেকে একটা রিকশায় করে চারজন চলে গেলাম শাহবাগ চত্বরে।
আমরা সুপার হিরাে নয় - চতুর্থ পর্ব |
শামিম রিকশা থেকে নেমে একটা মুদির দোকান থেকে এক কেজি চাল অরি পাচটা ডিম কিনে নিয়েছে। শিমুল বলে উঠল কিরে দোস্ত তুই কি আমাদেরকে এখানে ভাত আর ডিম রান্না করে খাওয়াবি। শামিম চলতে লাগল আমরা তার পিছু পিছু চললাম। একটা মহিলা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সবাইকে কিছু একটা বুঝাতে চাচ্ছে। তার চুলগুলো জট পাকানো, একটা ময়লা ছেড়া কাপড় পরা আর হাতে কিছু কাগজ। রাস্তার গাড়িগুলোকে আস্তে চলার জন্য অনুরােধ করছে। শামিম গিয়ে সেই মহিলাকে সঙ্গে করে নিয়ে এলাে। আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাই সবাই চুপচাপ থাকলাম। আর শামিমকে অনুসরণ করতে লাগলাম। শামিম একটা গলির ভিতর দিয়ে ঢুকেছে। খুবই চিপা একটা গলি একজন মানুষ খুব কষ্ট করে এই গলি দিয়ে হাঁটতে পারবে। ইমু বলল, দোস্ত কই নিয়া যাচ্ছিস আমাদের? আর যাই করিস কিডনাপ করিস না দোস্ত। আমার বাবা আমার জন্য কোনাে টাকা কিন্তু কিডনাপারদের দেবে না। উলটো বলবে কিডনাপ হইছে ভালাে হইছে বিয়ের খরচ তাে বাইচা গেছে। আর কষ্ট কইরা মেয়েরে খরচ কইরা বিয়ে দিতে হইবাে না। আমরা সবাই হা হা করে হাসতে লাগলাম। এমন একটা সিরিয়াস বিষয়ের মধ্যেই এরা মজা করছে।
শামিম একটা ঘরে ঢুকল। একটা ছােট্ট টিনের ছাউনির নিচে একটা ছােট্ট রুম। একটা ভাঙা খাট আর একটা সেলফ ছাড়া তেমন কিছুই নেই রুমের ভিতর। শামিম সেই মহিলাকে একটা শিকল দিয়ে খাটের এক পায়ের সাথে বাঁধল। আমাদেরকে বলল উনি আমার মা। আমার মা একজন পাগলি যদি এটা জানার পর আমার সাথে বন্ধুত্ব রাখতে তােদের কোনাে সমস্যা থাকে তাহলে তােরা যেতে পারিস। আর শােন এই প্রথম তােরা আমার বাড়ি । আসলি। একটু খেয়ে যাবি অবশ্যই।
শামিম তাে বলেছিল সে পুরান ঢাকায় তার পরিবারের সাথে থাকে। এদিকে । শামিম ভাত আর ডিম সিদ্ধ দিয়েছে। আমি তােদেরকে কখনাে সত্যিটা বলতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে তােরা যদি এই সত্যিটা জেনে যাস তাহলে হয়তাে আর আমার সাথে বন্ধুত্ব রাখবি না। আমি টিউশানি । করি আর মা-কে নিয়ে এই বস্তিতে থাকি। আমরা সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। জীবনে এর থেকে বেশি অবাক কখনাে হইনি। কেমন জানি একটা শক খেলাম। আমরা কখনো শামিমকে দেখে বুঝতেই পারিনি তার ভিতর এতটা কষ্ট। এতটা যন্ত্রণা নিয়ে সে আমাদের সাথে হাসিমুখে দিনের পর দিন কাটিয়েছে। ইমু বলে উঠল দোস্ত আন্টির এই অবস্থা কী করে হলাে?
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
চার বছর আগে আমার ভাইয়া আমার মা-কে নিয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরছিল। তােদেরকে কোনােদিন আমার ভাইয়ার কথা বলা হয়নি। আমার ভাইয়া তখন মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। চাকরির জন্য পড়াশােনা করছে। আর বেশ কিছু টিউশানি করিয়ে আমাদের সংসারটাকে কোনাে মতে টেনে নিচ্ছিল। আমার বাবা তাে মারা গিয়েছে যখন আমার বয়স মাত্র ছয়। বড় ভাইয়াই আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিল। খুব কষ্ট করছিল ভাইয়া। দিন-রাত পড়াশােনা করত। টিউশানি করত, কখনাে আমাকে কষ্ট কী জিনিস তা বুঝতে দিত না। ভাইয়া খুব মেধাবী ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্স করেছে। আমাদের সবার ধারণা ছিল ভাইয়া একদিন অনেক বড় চাকরি পাবে। কিন্তু এই যে বিধাতার লিখন। আমাদের কপাল খারাপ ভাইয়াকে আল্লাহ তাঁর কাছে নিয়ে নিল।
একদিন মা আর ভাইয়া পিজি হাসপাতাল থেকে ফিরছিল। শাহবাগ চত্বরে রাস্তা পার হতে গিয়ে মা হঠাৎ একটা গাড়ির সামনে পড়ে গেল। ভাইয়া মা-কে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে আর বাঁচাতে পারল না। একটা দ্রুতগামী বাস ভাইয়ার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। ভাইয়া সাথে সাথেই মারা যায়। আর মা পাশে থেকে তার ছেলের অ্যাক্সিডেন্ট দেখল। কীভাবে চোখের সামনে ছেলের উপর দিয়ে গাড়ি চলে যায় তা দেখল। মা সেদিন থেকেই পাগল হয়ে গেল। চোখের সামনে ছেলের এমন মৃত্যু মা মেনে নিতে পারেনি। এরপর থেকে মা প্রতিদিন সেই জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
Post a Comment