ভাইয়াকে খোঁজে, সেখানে গাড়িগুলােকে অনুরােধ করে আস্তে চলার | জন্য। মাঝে মাঝেই মা খুব পাগলামি করে। সব জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে এজন্য মাকে বেশিরভাগ সময় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। একবার মাকে দুই দিন বেঁধে রেখেছিলাম। মা-কে যেতে দেইনি শাহবাগ চত্বরে। মা দুই দিন চোখের জল ফেলেছে। কিছু মুখে দেইনি। আমার মা-ও প্রায় মরতে বসেছিল। কী করব বল আমার মা তাে। তাই প্রতিদিন আমি ইউনিভার্সিটিতে আসার সময় মা-কে শাহবাগ চত্বরে নামিয়ে দিয়ে আমি তােদের সাথে ক্লাস করতে আসি। আর আমার ক্লাস ছুটির পর আমি মা-কে নিয়ে বাড়ি ফিরি। কোনােদিন তােদেরও বলা হয়ে ওঠেনি। কী করে বলব বল। তাই আমি সারাক্ষণ চুপচাপ থাকি। কম কথা বলি। আমার খুব কষ্ট । হয় রে। আমি তাে এসব কারাে কাছে প্রকাশও করতে পারি না।
আমরা সুপার হিরো নয় - শেষ পর্ব |
আমাদের সবার চোখেই পানি। ইচ্ছে করছে শামিমকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্না করি। এতটা কষ্ট মানুষ কী করে বুকের ভিতর চেপে রাখতে পারে, শামিমকে না দেখলে হয়তাে কখনাে জানা হতাে না। শামিম রান্না করছে আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছি। তাকিয়ে আছি শিকলে বাঁধা মহিলাটির দিকে। কতটা কষ্ট পেয়ে মানুষটা আজ পাগল! শামীম গরম ভাত আর ডিম ভুনা করেছে। একটা মাটির পাত্রে ভাত আর ডিম মেখে তার মাকে খাইয়ে দিচ্ছে। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা সাতটা। রাত হয়ে যাচ্ছে। বাসায় ফিরতে হবে। গরম ভাত আর ডিম ভুনা খেয়ে আমরা শামিম-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়েছি।
ইমু আমাকে বলছে দোস্ত আজ তাে আর তাের গল্প শােনা হলাে না। আমি হাসলাম আজ যতটা অনুধাবন করেছি সেখানে আমার বলা গল্প এর ধারেকাছেও যেতে পারবে না। তবে দোস্ত খারাপ লাগছে খুব। ভিতরটা কেমন জানি ফাঁকা লাগছে খুব। ইচ্ছে করছে শামিম-এর পাগলি মায়ের কাছে থেকে যেতে। আরেকটু কাছ থেকে একটা পাগলের কষ্টগুলাে অনুধাবন করতে। শিমুল বলে উঠল দোস্ত আমার জমানাে কিছু টাকা আছে। এক সপ্তাহ পর থেকে না চল দোস্ত এই মুহূর্ত থেকে কিছু করার চেষ্টা করি। সেদিনই আমরা একটা সংগঠন করি যার নাম দেই : “মানবতার সেবা”
এখন ২০১৮ সাল। আমাদের সেদিনের করা এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় চার লক্ষ। আমাদের চার জনের দেখা স্বপ্নটা আজ এদেশের চার লক্ষ মানুষ দেখছে। আমরা প্রতিনিয়ত অসহায় মানুষদের পাশে থাকছি। এদের দুঃখ-কষ্ট আরও কাছে থেকে অনুভব করছি। এদের মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে তুলতে আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করছি। আমাদের পড়াশােনা শেষ। সবাই এখন নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত। হয়তাে বা আমরা আর আগের মতাে করে প্রতিদিন টিএসসি-তে আড্ডা দিতে যেতে পারি না। কিন্তু আমরা কাজ করছি একসাথেই। ইমুর বিয়ে হয়ে গেছে দুটো ছেলে হয়েছে। ইমুর স্বামীও এখন আমাদের গ্রুপের সদস্য।
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
একটা সুখবর দেই শামিম পরবর্তীতে বিসিএস ক্যাডার হয়েছিল শামিম-এর মা এখন অনেকটা ভালাে। ইমু হাউজ ওয়াইফ হয়ে গিয়েছে। আর শিমুল এখন দুটি কোম্পানির মালিক। আমি তাদের মতাে এত বড় কিছু হতে পারিনি। আমি পরবর্তীতে আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম এসব দুঃস্থ-অসহায় মানুষদেরকে নিয়ে। এই সংগঠনটি এত বড় করতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। কত ফান্ডিং করেছি। বড় বড় ব্যক্তিদের দ্বারপ্রান্তে ঘুরতে ঘুরতে নিজের ক্যারিয়ারের দিকে আর নজর দিতে পারিনি। পরবর্তীতে দেখলাম আমি তাে কিছুই পারি না। নিজের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারিনি।
আসলে আমার ধ্যান, আমার চিন্তাভাবনা, আমার অনুভূতিগুলাে সব অসহায় মানুষকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল তাই শুরু করে দিলাম লেখালেখি । উদ্দেশ্য ছিল আরও বেশি মানুষদেরকে আমাদের সাথে যুক্ত করা। লেখার মাধ্যমে আরও কিছু মানুষকে অনুপ্রাণিত করা। ব্যাস সেই থেকে পরিচিতি পেতে থাকি লেখক হিসেবে। আমার লেখাগুলাে পাঠকের কাছে বেশ বাস্তবিক মনে হতে লাগল। ধীরে ধীরে আমি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করি। 1 জাতীয় পুরুস্কার থেকে শুরু করে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছি। প্রচুর মানুষের সাথে চলাফেরা করেছি, প্রচুর মানুষের জীবনকে পড়তে চেষ্টা করেছি। আর আমি আমার লেখার মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছি।
আমি আমার প্যাশনের জায়গাটি খুঁজে পেয়েছি। মানুষের কষ্টগুলাে আমাকে বেশ ভাবায়। আমি এদের কষ্ট সহ্য করতে পারি না। হয়তাে আমি খুব ধনবান কেউ না, হয়তাে বা প্রচুর অর্থ দিয়ে আমি এদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। কিন্তু আমি আছি এদের পাশে, আমি থাকব এদেরকে নিয়েই।
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই।
Post a Comment