শিমুল এবার তাের গল্প শুরু কর :
শিমুলের গল্প
ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন। আমি ঢাকা থেকে একটা লােকাল ট্রেইনে করে ' দাদু বাড়ি যাচ্ছিলাম। আমার দাদু বাড়ি ময়মনসিংহ। টঙ্গি স্টেশন থেকে একটা পাগল ট্রেনে উঠে পড়ে। গায়ে ময়লা আর ছিড়া একটা শার্ট। কবে একটা বস্তার মতাে ঝুলানাে ব্যাগ। চুল-দাড়ি বেশ বড় বড়। মুখে বিড়বিড় করে কী যেন বলে যাচ্ছে। সে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে ট্রেনের দরজার সামনে বসে পড়েছে। ট্রেনে থাকা ভদ্রলােকগুলাে এই পাগলকে দেখার জন্য ভিড় করেছে।
আমরা সুপার হিরাে নয় - তৃতীয় পর্ব |
কেউ কেউ নাকে হাত চেপে ধরেছে। কেউ গালিগালাজ করছে। মহিলারা এমন একটা ভাব করছে যেন তারা খুবই ভয় পাচ্ছে। আসলে বিষয়টা এমন— তারা সবাই মজা পাচ্ছে। কৌতূহলী একজন গিয়ে পাগলের সাথে কথা বলাও শুরু করে দিয়েছে। সে পাগলটাকে জিজ্ঞেস করেছে সে কোথায় যাবে। পাগল বিড়বিড় করে অনেক কথায় বলল সেই কথা বােঝার ক্ষমতা আমাদের মতাে সাধারণ মানুষের নেই। আমার পাশে বসে থাকা আংকেল নাক চেপে ধরে বসে আছে অনেকক্ষণ। আর নাক চেপে ধরে বলছে দেশে পাগল-ছাগলের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। একটা পাগলের সাথে কি ভদ্রলােক যেতে পারে। উফফফ কী গন্ধ!
লােকটা হতাশ হলাে কারণ আমি তার কথার সাথে সাড়া দেইনি। তবে পাশের মানুষগুলাে এতক্ষণ এর একটা সমাধান ঠিকই বের করে ফেলেছে। পরের স্টেশন আসলে টিটিকে ডেকে এনে পাগলটাকে নামিয়ে দিতে হবে। এত দূরের যাত্রায় তাে আর পাগল নিয়ে যাওয়া যায় না। এখানে অনেক ভদ্রলােক আছে। তা ছাড়া ছােট ছােট বাচ্চারা আছে, মহিলারা ভয় পাচ্ছে। এক মহিলা বলে উঠল পাগলের শরীর থেকে পাঠার মতাে গন্ধ বেরােচ্ছে। আর একজন বলছে আরে না শুয়ােরের মতাে গন্ধ বের হচ্ছে। কোনােভাবেই এই পাগলকে ট্রেনে রাখা যাবে না। ইতােমধ্যেই ট্রেনটি রাজেন্দ্রপুর স্টেশনে এসে থেমেছে। যাত্রী উঠা-নামা করছে কিন্তু পাগলটা । চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। একজন গিয়ে টিটিকে খুঁজে নিয়ে এসে বলল এই পাগলটাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিতে। টিটি বলল পাগলটা পরের স্টেশনেই নেমে যাবে। মাঝে মাঝেই সে টঙ্গি স্টেশন থেকে উঠে জয়দেবপুর নেমে যায়।
ট্রেনে থাকা ভদ্রলােকদের বিষয়টি মেনে নিতে এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। পাগলের শরীর থেকে পাঁঠার মতাে গন্ধ বের হচ্ছে। এর মধ্যে এক মহিলা বমি করার ভান শুরু করল। আদতে তার কিছুই হয়নি। সিদ্ধান্ত হলাে তাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হবে। ট্রেন চলতে শুরু করে দিয়েছে। স্টেশন থেকে ট্রেনটি বেশ খানিকটা দূরে চলে এসেছে। সাহস করে আর কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না। ইতােমধ্যেই একজনকে পাওয়া গেল সে মহিলার পাশে বসা সিট থেকে উঠে গিয়ে বুক টান টান করে হাঁটতে লাগল আর সামনের লােকদের বলছে, “এই দেহি সরেন তাে মিয়ারা।”
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
একটা পাগলকে ট্রেন থেকে নামাতে পারেন না। আপনারা কি পুরুষ? এই বলে পাগলটাকে চলতি ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। পাগলটা চারপাঁচটা ডিগবাজি দিয়ে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিয়ে চিৎকার করতে লাগল। আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি পাগলটার শরীর থেকে রক্ত ছিটকে বের হচ্ছে। ট্রেনে থাকা লােকজন হাততালি দিয়ে লােকটাকে বরণ করে নিল। আমি সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম :
“অমানুষগুলাে দেখতে অবিকল মানুষের মতােই হয়”
বাদাম ফুরিয়ে গিয়েছে। আসলে আমাদের গল্প শুরু হলে বাদাম আর সময় কখন যে শেষ হয়ে যায় তার খবর থাকে না। আমাদের আড্ডার পরিবেশ বেশ থমথমে সবার মন খারাপ। আমি চেষ্টা করছি পরিস্থিতি একটু হালকা করতে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। সে যাহােক, আমি বাদাম আনতে গেলাম। এই । শমিম তুই কিন্তু আমাকে ছাড়া গল্প শুরু করবি না। খানিক সময় পর আমি আবার এক কেজি বাদাম কিনে এনেছি সাথে বিট লবণ। গল্পের সাথে বিট লবণ দিয়ে বাদাম জাস্ট অসাধারণ। গল্পের যখন ইমােশন দিক চলে আসে তখন সবার চোখে পানি টলমল করে তখন সবার খাওয়া বন্ধ থাকে। সেই সুযােগে আমি বেশ কিছু বাদাম খেয়ে নিতে পারি। হা হা হা...
Post a Comment