পাগলটা আমাকে ইশারা দিয়ে দেখাতে লাগল সে কিছু খাবে। আমি একটু দূরে একটা দোকান থেকে পাগলটার জন্য কিছু খাবার কিনলাম সেখানে কিছু লােকজন বলাবলি করতে লাগল পাগলটা খাবারের জন্য এক লােকের পথ আটকে রেখেছিল পরে সেই লােকটা পাশে পড়ে থাকা কাঁচা লাকড়ি দিয়ে পাগলটাকে বেশ কিছু আঘাত করে সেখান থেকে চলে যায়। অজান্তেই আমার চোখে পানি চলে এলাে। খুব মায়া হলাে পাগলটার জন্য। একজন মানুষ যে কি না তার ক্ষুধা লেগেছে এটাও ঠিকমতাে বুঝতে পারে । এরকম একজন পাগলকেও মানুষ কী করে আঘাত করতে পারে।
আমরা সুপার হিরাে নয় - দ্বিতীয় পর্ব |
আমি কয়েকটা রুটি কিনে পাগলটার হাতে দিতেই খুব খুশি হয়ে গেল। তৎক্ষণাত খেতে লাগল। আমি প্রাণভরে পাগলটার খাওয়া দেখলাম। আমি আমার জীবনেও এত আনন্দ পাইনি কখনাে। এর পর থেকে প্রতিদিন আমি কলেজে আসা-যাওয়ার পথে পাগলটাকে কিছু না কিছু কিনে দিতাম। সে চুপচাপ একটা গাছের পাশে বসে থাকত। তার হাতে একটা বস্তা থাকত।
পাগলটার শারীরিক গঠন অনেক লম্বা আর শ্যামলা বর্ণের। চুল আর দাড়িগুলােও বেশ এলােমেলাে। বয়স চল্লিশ কিংবা তার একটু বেশি হবে। শুনেছি তিন বছর ধরে পাগলটা এই এলাকায় এসেছে। তারপর থেকে এখানেই এই বট গাছকেই বাসা বানিয়ে থাকতে শুরু করেছে। আমি আমার । সব বন্ধুদের বললাম পাগলটার কথা। তারপর থেকে আমরা আমাদের টিফিনের টাকা থেকে প্রতিদিন এই পাগলটাকে খাওয়াতাম। প্রতিদিন আমাদের জন্য এই পাগলটা অপেক্ষা করত। আমাদের দেখলেই সে এক মায়াবী হাসি দিত। আর পরম তৃপ্তিতে প্রাণভরে খেত। আর আমরা প্রতিদিন এই আনন্দটুকু নিয়ে বাড়ি ফিরতাম ।
তিনদিন হয়ে গেল পাগলটাকে আর দেখছি না। কেমন জানি একটা চাপা কষ্ট অনুভব করতে থাকলাম আমরা সবাই। পাঁচ দিন পর জানতে পারলাম। এলাকার কিছু মানুষ পাগলটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তার অপরাধ ছিল সে মানুষের পথ আটকিয়ে কিছু খেতে চাইত। খবরটা শােনার পর আমরা আর নিজেদেরকে ধরে রাখতে পারিনি। আমরা দৌড়ে চলে যাই সেই বটগাছ তলায়। যেখানে পাগলটা শান্ত হয়ে বসে থাকত। আমরা প্রতিদিন কিছু না কিছু কিনে খাওয়াতাম। আর সে পরম আনন্দ নিয়ে আমাদের দেওয়া খাবার খেত। আর আমরা এক অদ্ভুত তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। সেদিনের পর থেকে আমরা কেউ আর সেই রাস্তা দিয়ে কখনাে যাইনি। আজও বুকের ভিতরটা কেমন জানি কেঁদে ওঠে। আমার চোখে এখনও ভেসে ওঠে সেই পাগলটার ছবি।
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
মাঝে মাঝে ঘৃণা হয় খুব। আমরা কেমন মানুষ। আমাদের মধ্যে সামান্য পরিমাণ সহানুভূতিও নেই। একটা মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলকে আমরা ছাড় দিতে পারি না। আমরা তাদের কষ্ট বুঝতে চাই না। ছি!
ইমুর ভেতর কেমন জানি একটা চাপা কান্না আজ প্রকাশ পাচ্ছে। সচরাচর ইমুর মন খারাপ আমরা খুব একটা দেখি না। প্রতি সপ্তাহেই আমাদের এরকম আয়ােজন থাকে। আমরা আমাদের দুঃখ, কষ্টগুলাে শেয়ার করি আর কাঁদি। আমাদের সবার মধ্যে এত ভালাে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠার পিছনে একটা কারণ বেশ লক্ষণীয় – আমরা সবাই প্রচুর কাঁদতে পারি। আমাদের প্রত্যেকের ভিতরেই কেমন জানি একটা ফিলিংস কাজ করে। আমরা সবসময় খুব চেষ্টা করি অবহেলিত অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করতে। মানুষের জন্য কিছু করার মানসিকতা থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছিল।
Post a Comment