F আমরা সুপার হিরাে নয় - প্রথম পর্ব

আমাদের কাছে শুক্রবার মানেই একটা নতুন আইডিয়া খুঁজে পাওয়া। নতুন কিছু নিয়ে ভাবা, নতুন কিছুর পরিকল্পনা করা। জীবনের কিছু পরীক্ষিত সত্যি হলাে আপনি যেমন, ঠিক তেমন কিছু মানুষের সাথেই আপনার ঘনিষ্ঠতা হয়ে উঠবে। আমি স্কুলে সবার আগে গিয়ে পিছনের বেঞ্চ দখল করতাম। ক্লাসের খুব ভালাে ছাত্ররা আমার সাথে মিশতে চাইত না। 


আমরা সুপার হিরাে নয় - প্রথম পর্ব,আমরা সুপার হিরাে নয়,জীবনের গল্প,ভালোবাসার গল্প,রোমান্টিক গল্প,Fact Mohi
আমরা সুপার হিরাে নয় - প্রথম পর্ব



আমারও ভালাে লাগত না এদেরকে। আমার সাথে ভালাে বন্ধুত্ব হতাে যারা আমার মতােই ফাকিবাজ ছিল। আবার ক্লাসের খুব ভালাে ছাত্রদের একটা গ্রুপ থাকত। ঠিক একইভাবে জীবনের প্রতিটি অধ্যায় একইভাবে সাজানাে। তেমনি আমাদের একটা গ্রুপ রয়েছে, এই গ্রুপটা শুরু করেছিলাম মাত্র চারজন মিলে– আজ এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় চার লক্ষ।




শুরুটা ২০১০ সালে


আমরা ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি। আমরা ভার্সিটির নিয়মিত স্টুডেন্ট ছিলাম। প্রতিদিন ভার্সিটি যেতাম। যদিও আমাদের ক্লাস করাটা বাধ্যতামূলক ছিল না। আমরা তাে আর ক্লাস করতে যেতাম না। যেতাম আড্ডা দিতে। শামিম, শিমুল, ইমু আর আমি তুষার। প্রতি শুক্রবার আমরা চলে যেতাম টিএসসিতে। বিকেল চারটা থেকে আমাদের আড্ডা শুরু হতাে আর শেষ হতাে মাগরিবের পর। আমরা অপ্রয়ােজনীয় কোনাে বিষয় নিয়ে কখনােই আডডা দিতাম না। যদিও আমরা স্টুডেন্ট হিসেবে খুব একটা সুবিধার ছিলাম না। তবে কিছু একটা করার প্রবণতা আমাদের বরাবরই ছিল। আমরা করেছিও অনেক কিছু। প্রতি শুক্রবার আমরা একটা বিষয় নির্ধারণ করতাম আর পুরাে সপ্তাহ জুড়ে সেই বিষয় নিয়ে প্ল্যানিং করতাম। আর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করতাম । আমরা আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা কিংবা নিজেদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলাে সবার সামনে উপস্থাপন করতাম। সমাজের এসব অবহেলিত লােকের মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে আমরা ভাবতাম। কীভাবে এর সমাধান করা যায় তার প্ল্যানিং করতাম। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী এই কাজগুলাে করতাম। সে যাহােক, এমনি এক শুক্রবারে আমাদের আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু হলাে : পাগল আর মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। 




আমরা টিএসসির চত্বরে গােল হয়ে বসলাম। আর বাদাম কিনে খেতে লাগলাম। আজ আমরা আমাদের নিজেদের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু গল্প শেয়ার করব। আজ আমরা পাগল অর্থাৎ এসব মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের যন্ত্রণা একটু অনুভব করব। সমাজে এদের অবস্থান কতটুকু তা বােঝার চেষ্টা করব। সীদ্ধান্ত হলাে প্রথমে ইমু তার গল্প শােনাবে। লেডিস ফাস্ট বলে কথা।






ইমুর গল্প


রাজশাহী থাকি তখন। সেখানেই একটা কলেজে ভর্তি হয়েছি। ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে। নিয়মিত ক্লাসে যেতাম। আমরা প্রায় ছয়-সাত জন একসাথে দলবেঁধে কলেজে যেতাম আবার দলবেঁধেই কলেজ থেকে ফিরতাম। এই আসা-যাওয়ার পথে একজনের সাথে প্রতিদিনই দেখা হতাে। কিন্তু কিছুদিন ধরে তাকে আর দেখছি না। কাউকে জিজ্ঞেস করতেও পারছি না। আমি তাে তার নাম জানি না। তার কোনাে পরিচয়ও তাে নেই কী করে খুঁজব লােকটাকে। না একটা পরিচয় আছে সে পাগল। এলাকায় সে শান্ত পাগল নামে পরিচিত ছিল। শান্ত পাগল বলতে লােকটা পাগল হলেও চুপচাপ ছিল বেশ। তাই এলাকায় তার এই শান্ত স্বভাবের জন্য তার নাম দিয়েছিল শান্ত পাগলা।


আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব 
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব

না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব 
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi

আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব




এই পাগলটাকে খোঁজার পিছনে আমার একটা কারণও রয়েছে। আমি যেদিন প্রথম কলেজে যাওয়ার জন্য এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম পাগলটা আমার পথ আগলিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি তাে ভয়ে জ্ঞান হারানাের মতাে অবস্থা। একটু ভালােভাবে যখন লক্ষ করলাম দেখলাম পাগলটার দুচোখের কোণে পানি টলমল করছে। সে কিছু বুঝাতে চাচ্ছে আমাকে। আমি আমার ব্যাগ থেকে দশ টাকার একটা নােট বের করে তাকে দিলাম কিন্তু সে টাকা নিতে চাচ্ছে না। আমাকে বিড়বিড় করে অনেক কিছুই বলল কিন্তু আমি তার ভাষা কিছুই বুঝলাম না। হঠাৎ তার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম পা থেকে রক্ত ঝরছে। গােড়ালির উপর অনেকটা কেটে গিয়েছে। না এটা কেটে যাওয়ার দাগ নয় নিশ্চয় কেউ কিছু দিয়ে আঘাত করেছে পাগলটাকে।

Post a Comment

Previous Post Next Post