আজ বাড়িতে সবার সাথে কথা হয়েছে। বলেছি খুব ভালাে কোম্পানিতে কাজ পেয়েছি। আমাকে গাড়িতে করে নিয়ে যায়। আবার গাড়ি করে দিয়ে যায়। এসি রুমে বসে শুধু লেখালেখি করি। বাবা-মা সবাই খুশি হয়েছে। মা বলেছে আমি জানি আল্লাহ আমার ছেলের জন্য ভালাে কিছুই করবে। আমি প্রতিদিন তাের জন্য দোয়া করি আল্লাহ আমার কথা শুনছে। আমি উপরের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
না পাওয়ার গল্প - দ্বিতীয় পর্ব |
মা একটি জায়নামাজ চেয়েছে। আমি বলেছি মা তােমার জন্য জায়নামাজ, তজবি, কাপড়, সুরমা এগুলাে সব কিনে রেখেছি। সামনের মাসেই পাঠিয়ে দেব। মা যে কী খুশি । হয়েছিল বােঝানাে যাবে না। পরিবারের প্রত্যেকেই কিছু না কিছু দাবি করে বসল। সবাইকে বলেছি সামনের মাসেই সব কিনে পাঠাব।
দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে আমি না খেয়ে খেয়ে কাজ করছি। আমি শুকিয়ে গেছি। নিজে মরে গেলেও পরিবারকে কখনাে বুঝতে না দেওয়ার নামই বিদেশ। নিজে না খেয়েও অনেক খেয়েছি বলে অভিনয় করার নামই বিদেশ। কাউকেই কখনাে বুঝতেই দিতাম না। আর একটা কাজ পেয়েছি। বাবুর্চিকে সাহায্য করার কাজ। আমাকে তরিতরকারি কেটে রেডি করে দিতে হবে। এভাবেই প্রতিনিয়ত একটা কাজের পর আরেকটা কাজ করে চলেছি। একদিন মাছ কাটতে গিয়ে নিজের দুইটা আঙুল কেটে ফেলি। আমার আঙুল দুইটা কেটে পড়ে রইল। নিজের চোখের সামনে নিজের অঙ্গ নষ্ট হলে কেমন লাগতে পারে তা কি কখনাে বলে প্রকাশ করা যাবে?
সেদিন আমার চিৎকারে আকাশ-বাতাস থমকে গিয়েছিল। সেই অবস্থায় বাড়ি থেকে ফোন আসল। মা বলল বাবা আমি খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি। তুই ঠিক আছস বাবা? চোখে পানি আর বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম। মা তুমি এগুলাে বিশ্বাস করাে? স্বপ্ন কি কখনাে সত্যি হয়? আমার অভিনয় সেদিন সবাই দেখল। আমি ফোন রাখার পর সবাই সেদিন একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কাদল। সেক্রিফাইজ কথাটা কেবল তৈরিই হয়েছে প্রবাসীদের জন্য।
দুই মাস আমি কাজ করতে পারলাম না। আমার দুইটা আঙুল নেই কপাল ভালাে বাম হাতের আঙুল কেটেছে যদি ডান হাতের আঙুল কাটত তাহলে কী অবস্থা হতাে। আমি আবার কাজ করতে শুরু করলাম আর আবার নতুন কাজের সন্ধান করতে লাগলাম। এখন আর কেউ আমাকে কাজ দিতে চায় না। আমার দুইটা আঙুল নেই বলে। মানুষের হাতে-পায়ে ধরে কাজ নিই।
একটা নতুন কাজ পেলাম খেজুর গাছে উঠে খেজুর পেড়ে দেওয়া। মাসে বাংলাদেশের টাকায় প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। অনেক টাকা হলেও এই কাজ কেউ করতে চায় না। এর কারণ হলাে সৌদি আরবের খেজুর গাছগুলাে আমাদের দেশের গাছের মতাে না। এগুলাে অনেক উঁচু আর গাছগুলােতে উঠা অনেক কষ্টের। আমি চাকরিটা নিলাম। একটা বিশাল বাগানে আমার কাজ পড়ল। সেখানের গাছগুলােতে উঠে আমাকে খেজুর পেড়ে দিতে হবে। বাড়িতে ফোন দিয়ে বললাম, আমার খুব ভালাে একটা কাজ হয়েছে। আগেরটার থেকেও ভালাে। আমি দেশে থাকতে কখনাে গাছে উঠতে পারতাম না আর এখন গাছে উঠা আমার জন্য মামুলি এক ব্যাপার। জীবন মানুষকে কই থেকে কোথায় নিয়ে যায় তা নিজেকে না দেখলে হয়তাে বুঝতাম না।
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT
দুই বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে সব ঋণ শেষ করে ফেলেছি। বাড়িতেও এখন অনেক টাকা পাঠাই। ছেলেটাও বড় হতে লাগল। বাবা কয়দিন ধরে খুব অসুস্থ আমাকে খুব দেখতে চাচ্ছে। কিন্তু এটা কী আর সম্ভব বাবাকে বললাম, বাবা তুমি টেনশন করাে না। আমি আর দুবছর পরই আসব। বাবার জন্য টাকা পাঠালাম, বাবাকে ভালাে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে বললাম।
একদিন খবর এলাে আমার বাবা আর নেই। আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। মাটিতে গড়াগড়ি করে কাঁদলাম। আমি আমার বাবাকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারলাম না। আমার বাবা আমার কাছে একটা টুপি চেয়েছিল। সৌদি আরবের টুপি, পারলাম না বাবার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে।
Post a Comment