F না পাওয়ার গল্প - তৃতীয় পর্ব

সেদিন আমি তিনবার জ্ঞান হারিয়েছিলাম। যেদিন নিজের অঙ্গ হারিয়েছিলাম সেদিনও তেমন কষ্ট মনে হয়নি, কিন্তু বাবাকে হারিয়ে মনে হয়েছিল আমি প্যারালাইসড হয়ে গেছি। বাবাকে একবার দেখার জন্য কত আর্তনাদ করেছি পারিনি, আমি যে প্রবাসী। আমাকে ছাড়াই আমার বাবার লাশ দাফন হয়ে গেল। বাবার কবরে এক মুঠো মাটিও দিতে পারলাম না। 


না পাওয়ার গল্প - তৃতীয় পর্ব,না পাওয়ার গল্প,ভালোবাসার গল্প,রোমান্টিক গল্প,জীবনের গল্প,কষ্টের গল্প,Fact Mohi
না পাওয়ার গল্প - তৃতীয় পর্ব


আস্তে আস্তে সব আবার স্বাভাবিক হলেও, বাবাকে না দেখার কষ্টে আজিও মুখ লুকিয়ে কাদি। আমার ছেলেটা কথা বলতে শিখে গিয়েছে। আমাকে ফোন দিয়ে অ, আ, এক, দুই এসব পড়া শােনায়। প্রবাসে আমার তিন বছর হয়ে গেছে। আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে বেশ। কিছু জমিও কিনে ফেলেছি। আমার এলাকার বন্ধুরা মাঝেমধ্যেই আমাকে ফোন দিয়ে অনেক কথা শােনায় যেগুলাে হয়তাে আমি সব বলতেও পারব না। আমার টাকা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে কিছু অশান্তিও দেখা দেয়।




বাড়িতে মা এবং বউ ঝগড়া করে। এগুলাে আমাকে গ্রামের মানুষ। ফোন দিয়ে বলে । সবকিছু কেমন জানি গােলমেলে হয়ে যাচ্ছে। আমার বউটাও কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ফোন করেই এইটা-সেইটা কত আবদার । দফায় দফায় আমাকে টাকা পাঠাতে হয়। মা ফোন দিয়েই কান্না করে বউয়ের নামে বিচার দেয়। আর বউ ফোন দিয়ে নানা কথা শােনায় কিন্তু এরা কেউ বুঝতে চায় না। আমি প্রবাসে থেকে আমার জীবন শেষ করে ফেলছি। এখনও এদের কাছে বলিনি আমার আঙুল হারানাের কথা। আমার শত কষ্ট মাটি চাপা দিয়ে রাখি শুধু এদেরকে চিন্তামুক্ত রাখার জন্য। আর এরা প্রতিনিয়তই আমাকে অশান্তিতে রাখে। আমাকে এদের আর মানুষ বলে মনে হয় না। আমি হয়ে গেছি একটা টাকা প্রসবের ম্যাশিন। ।




বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমার বউ নাকি এখন অনেকের সাথেই বাইকে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু আমি জিজ্ঞেস করলে অস্বীকার করে। জানতে পারলাম আমারই এক বন্ধুর সাথে নাকি অবাধে মেলামেশা করে বেড়াচ্ছে। প্রবাসে থেকে এত অশান্তি নিয়েও আমাদের হাসিখুশি থাকতে হয়। যদি প্রবাসীদের বুকের ভিতরটা কখনাে খুলে দেখানাের ব্যবস্থা থাকত তাহলে দেখা যেত কতটা না পাওয়ার বেদনা, কতশত কষ্ট বুকের ভিতর চাপা দিয়ে একজন প্রবাসী ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ আমার প্রবাস জীবনের পাঁচ বছর হয়ে গেল । এমন একদিনে আমি প্রবাসে এসেছিলাম। এই পাঁচ বছরে হারিয়ে ফেলেছি কতকিছু। চেনা মানুষগুলােও পরিবর্তন হয়ে গেছে।


আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব 
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব 
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার 
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT

লােকমুখে শুনলাম আমার বউ আমার মাকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আজ আমি কাজ করতে গিয়ে বুকে ব্যথা পেয়েছি। সেই ব্যথা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। বাড়িতে ফোন দিলাম বউ বলল মা | টিউবওয়েল থেকে পানি তুলতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে। মায়ের প্রচণ্ড জ্বর কথা বলতে পারছে না। কিছু ব্যথার ওষুধ কিনে মা-কে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। রাত তিনটা বাজে আমি আর থাকতে পারছি না। আবার বাড়িতে ফোন দিলাম, আমার বউয়ের নম্বর তখন ওয়েটিং দেখাচ্ছে। না এটাই প্রথমবার নয় এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে। যাহােক, আমার ফোন ধরেছে। মা-কে ফোনটা দিতে বললাম।



আজমল : মা তােমার কি হয়েছে? একটু কথা বলাে না মা।


মা : বাবা কিছু হয়নি আমার। বুড়া হয়েছি না এখন। বাতের ব্যথাটা বেড়ে গিয়েছে।


আজমল : মা তুমি না কলের পাড়ে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছ?


মা : আরে না তােরে কে বলেছে?


আজমল : তােমার বউমা বলেছে।


মা। : ও হ্যা তাই তাে, আমার কিছুই মনে থাকে না আজকাল বাবা।

Post a Comment

Previous Post Next Post