আমি হেরে গিয়েছি নিজের সাথে। আজ এই ঝলমলে রঙিন পৃথিবীটাকে কেমন জানি ফ্যাকাশে মনে হচ্ছে। জীবনে কোনােদিনও কিছু লিখতে পারিনি, তবে আজ মনে হচ্ছে আরেকটা বিষাদ-সিন্ধু রচনা হবে। আজ আমার জীবনের কিছু অর্থ খুঁজব। আমার প্রবাস জীবনের পাঁচ বছর পূরণ হলাে আজ। আমি জীবনকে কী দিয়েছি, আর কী ফেরত পেয়েছি তার একটা হিসাব করার জন্যই আজ আমার এত আয়ােজন।
না পাওয়ার গল্প - প্রথম পর্ব |
একটা না পাওয়ার গল্প
আমি আজমল, পেশায় একজন প্রবাসী। আমি যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ঠিক তখনি বিয়ে করে ফেলি। তারপর আর আমার পড়াশােনা করা হয়ে ওঠেনি। একটা টগবগে যুবক এক নিমিষেই কেমন বৃদ্ধ হয়ে গেল। বাবা-মায়ের অমতে বিয়ে আর দুবছরের মাথায় ছেলে সন্তানের পিতা হয়ে গেলাম। আমাদের পরিবারে উপার্জন বলতে কিছুই ছিল না। বাবা ছিলেন একজন স্কুল মাস্টার। আমার স্ত্রী মাইশা জাহান মুক্তি। আমরা একই ইউনিভার্সিটিতে একই ডিপার্টমেন্টে পড়তাম। দুবছর প্রেম আর অবশেষে বিয়ে। বিয়ের দুবছরের মাথায় আমার ছেলে পৃথিবীতে এলাে। আমার নামের প্রথম অক্ষর মিলিয়ে নাম রাখলাম আদর।
সংসারের খরচ বেড়ে যেতে থাকল। এতদিনে বাবার জমানাে সামান্য সঞ্চয় দিয়ে সংসার চলেছে। অভাব-অনটন খুব বেড়ে গেল। সে অনেক ঘটনা, পরিবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল আমাকে বিদেশ পাঠাবে। বাবা আমাদের বসতবাড়িটা রেখে সব জমি বিক্রি করে দিলেন। বাকি টাকা সুদে | ঋণ নিয়ে আমার বিদেশের টাকার ব্যবস্থা করা হলাে। আমি চলে এলাম সৌদি আরব। নিজের বাবা-মা, ভাই-বােন নিজের স্ত্রী আর আমার সদ্য পৃথিবীতে আসা সন্তান এদেরকে ছেড়ে আসার কষ্ট কোনােভাবেই বােঝানাে সম্ভব নয়। যার মাধ্যমে বিদেশে এসেছি সে ঠকবাজ। যে কাজের কথা বলে এনেছে এসে দেখি সেরকম কোনাে কোম্পানিই নেই। আমার মতাে আরও অনেকেই এসেছে। কারােরই কোনাে কাজ নেই। মনে হচ্ছিল আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে দিয়েছে।
একটা আবদ্ধ ছােট রুমে বাইশ জন মানুষ থাকি। ঠিকমতাে অক্সিজেন নিতেও কষ্ট হয়। আমার রুমে যারা আছে তারা কেউ কেউ ছয় মাস ধরে এখানে আছে কিন্তু কোনাে কাজ পাচ্ছে না। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এখানে সবাই দিনের বেলা ঘুমায় আর রাতের বেলা কাজের সন্ধানে রাস্তায় রাস্তায় ঘােরে। একজন মানুষ যখন প্রথম বিদেশে আসে তার যুদ্ধটা তার টিকে থাকার লড়াইটা কতটা কঠিন এটা শুধু একজন প্রবাসীই বলতে পারবে। মাস শেষ হলে আমাকে টাকা পাঠাতে হবে। আমার বাচ্চার দুধ কিনতে হবে। সুদে আনা ঋণ প্রতি মাসেই দিয়ে যেতে হবে। সাতদিন হয়ে গেছে আমি এসেছি বাড়ি তেও বলতে পারছি না। যদি বলি তাহলে টেনশন করবে। এভাবে আমার বসে থাকলে চলবে না। একটা না একটা কাজ আমাকে বের করতেই হবে। আমার রুমে থাকা একজন রাতের বেলায় রাস্তা ঝাড় দেয়। তাকে বলে আমিও শুরু করলাম ঝাড় দেওয়ার কাজ। ফজর পর্যন্ত রাস্তা ঝাড় দিতে থাকি।
এভাবে কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে থাকলাম। বাড়িতে টাকা পাঠালাম ছেলেটার জন্য দুধ কিনতে বললাম। ছেলেটা শুধু দুধ খেতে চায় না দুধের সাথে চিনিও লাগে। আমি টাকা পাঠিয়ে বললাম বেশি করে চিনি কিনে রাখতে । আমার প্রথম সন্তান খুব আদরের। তাই নামও রেখেছি আদর।
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT
এভাবে ধীরে ধীরে সময় যেতে থাকল। আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম। দেহে প্রয়ােজনীয় ভিটামিনের অভাব দেখা দিয়েছে। আমাকে চারদিন স্যালাইন দিয়ে রাখা হলাে। ডাক্তারের ধারণা আমি কোনাে খাবার খাই না আমার দেহে রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে।
বিদেশে আসার পর এই পর্যন্ত কখনাে পেট ভরে খেতে পারিনি। নিজে খেয়ে খেয়ে টাকা জমিয়ে বাড়িতে পাঠাতে থাকি। তিন মাস কেটে গেল। এখন আরেকটা কাজ পেয়েছি, টয়লেট ক্লিন করা। এতে ভালাে টাকা পাওয়া যায়। আমি রাতের বেলা রাস্তা ঝাড়ু দিতে থাকি আর দিনের বেলায় মানুষের বাসায় গিয়ে টয়লেট ক্লিন করি।
Post a Comment