প্রাথমিক অবস্থাগুলাের অনন্যতার সাথে স্থানীয় ভৌতবিধিগুলাের যাদৃচ্ছিকতা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যদি অনেকগুলাে বিন্যাসযােগ্য স্বেচ্ছস্থিরাঙ্কে (Parameters)-র মতাে ভর কিংবা যুগ্মযােগ্য অচর (Coupling Constant) থাকে, যার খুশি মতাে মূল্যাঙ্ক দেওয়া চলে, তাহলে তাকে পূর্ণতত্ত্ব বলা যাবে না। আসলে মনে হয় প্রাথমিক অবস্থা কিংবা তত্ত্বের স্বেচ্ছস্থিরাঙ্ক কোনােটাই যাদৃচ্ছিক নয়। বরং সেগুলাে কোনােভাবে খুব সযত্নে নির্বাচিত করা হয় কিংবা খুঁজে বের করা হয়।
উদাহরণ, যদি প্রােটন, নিউট্রনের ভর ইলেকট্রনের প্রায় দ্বিগুণ না হতাে তাহলে যারা মৌল পদার্থ গঠন করে এবং রসায়নশাস্ত্র এবং জীববিদ্যার ভিত্তি গঠন করে সেই প্রায় দুশাে সুস্থিত নিউক্লিয়াইড (nucleide—নির্দিষ্ট গঠনের কেন্দ্রবিশিষ্ট পরমাণুবর্গ) আমরা পেতাম না। একই ভাবে বলা যায়, প্রােটনের মহাকর্ষীয় ভর যদি উল্লেখযােগ্যভাবে পৃথক হতাে তাহলে আমরা এমন কোনাে তারকা পেতাম না যেখানে এ নিউক্লিয়াইডগুলাে গঠিত হতে পারতাে এবং যদি মহাবিশ্বের প্রাথমিক প্রসারণ সামান্য কম কি বেশি হতাে তাহলে ঐ ধরনের তারকাগুলাে বিবর্তিত হওয়ার আগেই মহাবিশ্ব চুপসে (Collapsed) যেতাে কিংবা এতাে দ্রুত প্রসারিত হতাে যে, মধ্যাকর্ষীয় ঘনীভবনের দ্বারা তারকাগুলাে কখনােই গঠিত হতাে না।
সত্যই কিছু লােক এতাে দূর অগ্রসর হয়েছেন যে, প্রাথমিক অবস্থা এবং স্বেচ্ছা স্থিরাঙ্কগুলােকে (Parameters) একটা নীতির স্তরে উন্নীত করেছেন। সেটি নরত্বীয় নীতি'। এর অর্থ হতে পারে পদার্থগুলাে যেমন আছে তেমন থাকার কারণ আমাদের অস্তিত্ব। এ নীতির একটা রূপ হলাে—বহু সংখ্যক বিভিন্ন মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে। তাদের ভৌত স্বেচ্ছা স্থিরাঙ্কগুলাের (প্যারামিটারগুলাের) এবং প্রাথমিক অবস্থার বিভিন্ন মূল্যাঙ্ক রয়েছে।
এ সমস্ত মহাবিশ্বগুলাের অধিকাংশেরই জটিল গঠন বিশিষ্ট বুদ্ধিমান জীব বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ নেই । কেবল খুব ক্ষুদ্রসংখ্যক মহাবিশ্বে আমাদের মহাবিশ্বের মতাে অবস্থা এবং স্বেচ্ছস্থিরাঙ্ক সম্ভব। বুদ্ধিমান জীবের বিকাশ সে সমস্ত মহাবিশ্বেই সম্ভব। আর সম্ভব তাদের প্রশ্ন করা—'আমরা যে রকম পর্যবেক্ষণ করছি মহাবিশ্বটি কেন সে রকম হলাে?' উত্তরে বলা যায় যে, অন্য রকম হলে এ প্রশ্ন করার মতাে কেউ থাকতাে না। বিভিন্ন ভৌত স্বেচ্ছা স্থিরাঙ্কগুলাের (Parameters) মূল্যাঙ্কের ভেতরে যে উল্লেখযােগ্য সাংখ্যিক সম্পর্ক দেখা যায় তার একটা ব্যাখ্যা নরত্বীয় নীতি থেকে পাওয়া যায়। এটাও কিন্তু সম্পূর্ণ সন্তোষজনক নয়। এর অন্য কোনাে গভীরতর ব্যাখ্যা আছে—এ রকম মনে হতে পারে। তা ছাড়া মহাবিশ্বের সব অঞ্চলের কারণ এটা হতে পারে না। উদাহরণ : আমাদের অস্তিত্বের জন্যে সৌরজগৎ নিশ্চয়ই পূর্বাহ্নেই দরকার। যেমন দরকার নিকটস্থ পূর্ব প্রজন্মের তারকাগুলাে। সেই তারকাগুলােতে, কেন্দ্রিয় সংশ্লেষণের সাহায্যে ভারী মৌল পদার্থগুলাে গঠিত হতে পারে। হয়তাে হতে আরে—প্রয়ােজন ছিলাে আমাদের পুরাে ছায়াপথেরই ।
যে মিলিয়ন মিলিয়ন ১০০০০০০০০০০০০ কিংবা ঐ রকম সংখ্যক নীহারিকা (ছায়াপথ) পর্যবেক্ষণযােগ্য মহাবিশ্বে আমরা মােটামুটি সমভাবে বণ্টিত দেখতে পাই, তাদের কথা ছেড়ে দিলেও অন্য কোনাে নীহারিকাও (Galaxy) অস্তিত্বের প্রয়ােজন ছিলাে । বৃহৎ মানে এ সম সতৃতার ফলে এ কথা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে, মহাবিশ্বের গঠন নির্ধারণ করে যথেষ্ট সাধারণ জাতিরূপের (Farly Typica) সর্পিল নীহারিকার বাইরে দিকে প্রান্তিক অঞ্চলের একটা অতি সাধারণ তারকা কক্ষে ঘূর্ণায়মান একটা অপ্রধান গ্রহে। অবস্থিত কতােগুলাে জটিল আণবিক গঠনের মতাে প্রান্তিক (Peripheral) একটা কিছু।
আমরা যদি নরত্বীয় নীতি’র দ্বারস্থ হই তাহলে মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা এবং ভৌত স্বেচ্ছা স্থিরাঙ্কগুলাের (Physical Parameters) ব্যাখ্যার জন্যে এমন একটা তত্ত্ব চাই যা এগুলােকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। কিন্তু সব ব্যাপার সম্পর্কে একটা ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব একবারেই পাওয়া মুশকিল। অনেকে কিন্তু এ কারণেও চুপ করে থাকে না। প্রতি সপ্তাহে ডাকযােগে আমি দু-তিনটি ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব পাই। তার বদলে আমরা একাধিক আংশিক তত্ত্ব অনুসন্ধান করি । সে তত্ত্বশীল এমন কয়েকটি পরিস্থিতির বিবরণ প্রদান করে যে পরিস্থিতিতে কিছু ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অগ্রাহ্য করা যায় কিংবা একেবারে সহজ পদ্ধতিতে আসন্নতায় (Approximnation) আনা যায়।
প্রথমে আমরা মহাবিশ্বের বাস্তব আধেয়কে (Material Content) দু ভাগে ভাগ করতে পারি : ‘পদার্থকণিকা’– যেমন : কর্ক (Quark), ইলেক্ট্রন, মুয়ন (Muons) ইত্যাদি এবং অন্যান্যক্রিয়া’ (Interactions)—যেমন : মহাকর্ষ এবং বিদ্যুৎ চুম্বকত্ব। পদার্থকণিকাগুলাের বিবরণ প্রদান করা হয় অর্ধেক পূর্ণ সংখ্যার চক্রণের (Half-in-teger Spin) ক্ষেত্রের দ্বারা। এরা ‘পাউলির অপবর্জন তত্ত্ব’ (Pauli Exclusion Principle) মেনে চলে। এ নীতি যে কোনাে একই অবস্থায় একাধিক কণিকার অবস্থানে বাঁধা দেয়।
এ জন্যে আমরা এমন ঘন বস্তু (Solid Bodies) পেতে পারি যেগুলাে চুপসে বিন্দুতে পরিণত হয় না কিংবা বিকিরিত হয়ে অসীম অভিমুখে যায় না। পদার্থ তত্ত্ব (Matter Principles-মূল উপাদান) দু গােষ্ঠীতে ভাগ করা হয়। হ্যাড্রন (Hadron)-এগুলাে কার্ক দিয়ে গঠিত, অবশিষ্ট অংশ গঠিত লেপটন (Lepton) দিয়ে।
অন্যান্য ক্রিয়াকে পরিঘটনা তত্ত্বের (Phenomenologically) ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করা হয়। শক্তি অনুসারে তারা : শক্তিশালী নিউক্লীয় বলসমূহ—তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া হয় কেবল হ্যাড্রনের (Hadron) সাথে। বিদ্যুৎ চুম্বকত্ব-তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া হয়। আধানযুক্ত হ্যাড্রনের আর লেপটনের সাথে। দুর্বল নিউক্লিীয় বলসমূহ- তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া হয় সমস্ত হ্যাড্রন্ আর লেপটনের সাথে । আর মহাকর্ষের প্রতিক্রিয়া হয় সবারই সাথে। অন্যোন্যক্রিয়ার প্রতিরূপ পূর্ণসংখ্যা চক্রণ ক্ষেত্র (Integer-spin Field) দিয়ে । এরা পাউলির অপবর্জন তত্ত্ব মেনে চলে না। এর অর্থ একই অবস্থায় তাদের অনেক কণিকা থাকতে পারে।
বিদ্যুৎ চুম্বকত্ব এবং মহাকর্ষের ক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া দীর্ঘপাল্লা (longrange) বিশিষ্টও বটে। তার অর্থ বহু পদার্থকণিকা দিয়ে গঠিত ক্ষেত্রগুলাে পরস্পরযুক্ত হয়ে এমন একটা ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে যেটা স্কুলসত্বক মানে (Macroscopic) শনাক্ত করা সম্ভব। এ সমস্ত কারণে তাদের জন্যে প্রথম তত্ত্ব গঠিত হয়; সপ্তদশ শতাব্দীতে নিউটনের মহাকর্ষীয় তত্ত্ব, উনবিংশ শতাব্দীতে গঠিত ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎচুম্বকীয় তত্ত্ব। এ তত্ত্বগুলাে কিন্তু মূলত সুসঙ্গত ছিলাে না। কারণ সম্পূর্ণ তত্ত্বটির গতিবেগ যদি সমরূপ হয় তাহলে নিউটনীয় তত্ত্ব ছিলাে নিশ্চর। আবার ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব একটা বিশেষ পছন্দসই বেগের সংজ্ঞা দিয়েছে আলােকের গতিবেগ। শেষে দেখা গেলাে যে, এটি নিউটনীয় মহাকর্ষ তত্ত্বই বটে। তবে সেটিকে ম্যাক্সওয়েল্ তত্ত্বের নিশ্চর ধর্মের সাথে সুসঙ্গত করার জন্যে পরিবর্তিত করতে হয়েছে। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের ব্যাপক অপেক্ষবাদ এ কৃতিত্ব অর্জন করে। এ তত্ত্ব গঠিত হয় ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে।
মহাকর্ষ সম্পর্কে ব্যাপক অপেক্ষবাদ এবং ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎগতীয় তত্ত্ব এগুলােকে বলা হয় “চিরায়ত তত্ত্ব অর্থাৎ তারা এমন রাশি নিয়ে জড়িত যারা অবিচ্ছিন্ন চর’ (Continuously Variable) এবং অন্তত নীতিগতভাবে তাদের যাদৃচ্ছিক নির্ভুলভাবে মাপা সম্ভব। এ তত্ত্বগুলাে যখন পরমাণুর প্রতিরূপ গঠনের জন্যে ব্যবহার করার চেষ্টা হলাে তখন কিন্তু একটা সমস্যার সৃষ্টি হলাে। ক্ষুদ্র একটা পরা আধানযুক্ত কেন্দ্রক আর তার চারপাশে অপরা আধানযুক্ত একটা ইলেক্ট্রনের মেঘ— এ নিয়ে পরমাণুগুলাে গঠিত—এ তথ্য অনেক আগেই আবিষ্কৃত হয়েছিলাে।
আমাদের স্বাভাবিক অনুমান ছিলাে যে, পৃথিবী যেমন কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ইলেক্ট্রগুলােও তেমনি কেন্দ্রককে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু চিরায়ত তত্ত্বের পূর্বাভাস ছিলাে যে, ইলেক্ট্রগুলাে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরণ করবে। এ তরঙ্গগুলাে দূরে শক্তি বহন করে নিয়ে যাবে। ফলে ইলেক্ট্রগুলাে সর্পিল চক্র (Spiral) গতিতে কেন্দ্রকে পতিত হবে এবং পরমাণুটি চুপসে (Collapse) যাবে।
এ সমস্যার সমাধান হয় কোয়ান্টাম তত্ত্ব আবিষ্কারের ফলে। এ আবিষ্কার নিঃসন্দেহে এ শতাব্দীতে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার বৃহত্তম কৃতিত্ব। হাইসেন বার্গের ‘অনিশ্চয়তা নীতি' এ তত্ত্বের মূলগত স্বীকার্য। এ নীতির বক্তব্য হলাে, একটা কণিকার অবস্থান এবং ভরবেগের (Momentum) মতাে কতােগুলাে সংখ্যার জোড় যুগপথ যাদৃচ্ছিক নির্ভুলভাবে মাপা যায় না।
পরমাণুর ক্ষেত্রে এর অর্থ ছিলাে শক্তির নিম্নতম স্তরে ইলেক্ট্রন্ কেন্দ্রকের ভেতরে স্থিতি লাভ করতে পারে না। কারণ তাহলে এর অবস্থান নির্ভুলভাবে সংজ্ঞিত হবে (কেন্দ্রকের ভেতরে) এবং এর বেগও নির্ভুলভাবে সংজ্ঞিত হবে (সেটি হবে শূন্য)। তার বদলে অবস্থান এবং বেগ দুটিকেই কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা বণ্টনের (Probability Distribution) সাহায্যে কেন্দ্রকের চারপাশে প্রলিপ্ত (Smeared) হতে হবে। এ অবস্থায় ইলেক্ট্রটি বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গরূপে শক্তি বিকিরণ করতে পারবে না। তার কারণ হলাে ইলেক্ট্রটি নিম্নতর শক্তি স্তরে যাওয়ার মতাে কোনাে শক্তি স্তর থাকবে না ।
১৯২০ এবং ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে কণাবাদী বলবিদ্যা অণু এবং পরমাণুর মতাে তন্ত্র খুব সাফল্যের সাথে প্রয়ােগ করা হয়েছিলাে। এগুলাের কেবল সীমিত সংখ্যক মাত্রায় (Degree) স্বাধীনতা রয়েছে। অসুবিধার সৃষ্টি হলাে যখন লােকে এ তত্ত্ব বিদ্যুৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে প্রয়ােগের চেষ্টা করলাে। এ ক্ষেত্রগুলাের স্বাধীনতার মাত্রার (Degree) সংখ্যা অসীম—মােটামুটি প্রতি মাত্রা স্থান-কালে দুটি করে। স্বাধীনতার এ মাত্রাগুলােকে স্পন্দক (Oscillators) বলে ভাবা যেতে পারে। এদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব অবস্থান এবং ভরবেগ (Momentum) রয়েছে। স্পন্দকগুলাের স্থিতি হতে পারে না। কারণ তাহলে তাদের নির্ভুলভাবে সংজ্ঞিত অবস্থান এবং ভরবেগ থাকবে। তার বদলে প্রতিটি স্পন্দকের থাকে কিছু সর্বনিম্ন পরিমাণ তথাকথিত ‘অনপেক্ষ শূন্যাঙ্কীয় হ্রাস-বৃদ্ধি’ (Zero-Point Fluctuation) এবং একটা অশূন্যাঙ্ক শক্তি' (A Non-Zero Energy)। সমস্ত অসীম সংখ্যক মাত্রার স্বাধীনতার শক্তি ইলেক্ট্রনটির আপাতদৃষ্ট ভর এবং আধানকে অসীমে নিয়ে যাওয়ার কারণ হবে।
এ অসুবিধা দূর করার জন্যে ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের পুনঃপরিমিতি (Renormalization) নামে একটা পদ্ধতি তৈরি হয়। এ পদ্ধতিটি ছিলাে—কিছু অসীম রাশিকে যাচ্ছিকভাবে বিয়ােগ করে সসীম অবশিষ্ট রাখা। তড়িৎগতিবিদ্যার ক্ষেত্রে প্রয়ােজন ছিলাে এ রকম দুটি অসীম বিয়ােগ—একটা ইলেকট্রনের আধানের জন্যে। এ পুনঃপরিমিতি পদ্ধতি কখনােই কল্পন কিংবা গণিতের খুব দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় নি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে কাজ ভালােই হয়েছে। এর বৃহত্তম সাফল্য ছিলাে পারমাণবিক হাইড্রোজেনের বর্ণালির কয়েকটি রেখার সামান্য অপসারণ—ল্যাম্ব শিক্ট (Lamb Shift) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী তবে একটা সম্পূর্ণ তত্ত্ব গঠনের চেষ্টার দিক থেকে এ পদ্ধতি খুব সন্তোষজনক হয় নি। তার কারণ অসীম বিয়ােগ করার পর অবশিষ্টের সসীমের মূল্যাঙ্ক সম্পর্কে কোনাে ভবিষ্যদ্বাণী এ পদ্ধতি করতে পারে নি। সুতরাং ইলেকট্রনের ভর এবং আধান ব্যাখ্যা করার জন্যে আমাদের আবার ঐ নরত্বীয় নীতির উপরই নির্ভর করতে হবে।
১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে সাধারণত বিশ্বাস করা হতাে দুর্বল কেন্দ্রীয় বল এবং শক্তিশালী কেন্দ্রীয় বলের (Weak And Strong Nuclear Forces) পুনঃপরিমিতিকরণ (Renormalization) সম্ভব নয়। কারণ, তাদের সসীম করার জন্যে প্রয়ােজন হবে অসীম সংখ্যক অসীম বিয়ােগ করা। অসীম সংখ্যক সসীম অবশিষ্ট থাকবে— যা তত্ত্বের দ্বারা নির্ধারিত হয় নি ।
সে রকম তত্ত্বের কোনাে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা থাকবে না। তার কারণ, অসীম সংখ্যক স্বেচ্ছা স্থিরাঙ্গ (Parameter) মাপা সম্ভব নয়। তবে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে গেরার্ডটি RAPT (Gerard't Hooft) chaltanta urat T (Abdus Salam) 972 focool উইনবার্গ (Steven Weinberg)-এর পূর্ব প্রস্তাবিত তড়িৎচুম্বকীয় এবং দুর্বল পারস্পরিক ক্রিয়ার সংযুক্ত প্রতিরূপের পুনঃপরিমিতিকরণ (Renormalizatio) কেবল সীমিত সংখ্যক অসীম বিয়ােগের দ্বারা সম্ভব। সালাম-উইনবার্গ তত্ত্বে ফোট অর্থাৎ যে চক্ৰণ-১ কণিকা তড়িৎচুম্বকীয় পারস্পরিক ক্রিয়া বহন করে, তার সাথে w+, W- এবং Z নামক আর তিনটি চক্ৰণ-1 অংশগ্রহণ করে। ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে অত্যন্ত উচ্চশক্তিতে এ চারটি কণিকার আচরণ একই হবে।
ফোটন বিরামভর শূন্য অথচ w+, w- এবং Z-এর ভর অত্যন্ত বেশি—এ তথ্য ব্যাখ্যা করার জন্যে স্বতঃবৃত্ত প্রতিসমত্ব ভঙ্গ হওয়া (Spontaneous Symmetry Breaking) নামক নিম্ন শক্তিস্তরের একটা পরিঘটনা ব্যবহার করা হয়। এ তত্ত্বের নিম্নশক্তি স্তরের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে পর্যবেক্ষণ ফলে বিলক্ষণ মিল রয়েছে। এর ফলে ১৯৭৯ সলে সালাম-উইনবার্গ এবং শেড গ্ল্যাশােকে (Sheldon Glashow) সুইডিশ একাডেমি পদার্থবিদ্যায় নােবেল পুরস্কার দান করেন।
শেড গ্ল্যাশাে একাধিক একই রকম ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব গঠন করেছিলেন। তবে গ্ল্যাশাে নিজেই মন্তব্য করেছেন যে, নােবেল কমিটি নিজেরাই একটা জুয়া খেলেছিলেন। তার কারণ যে ভূক্তিতে (Regime) ফোটনবাহিত তড়িৎচুম্বকীয় বলগুচ্ছ এবং W+, W- এবং Z• বাহিত দুর্বল বলগুচ্ছ সত্যিই ঐক্যবদ্ধ হয় সেই ভুক্তিতে তত্ত্বটি পরীক্ষা করার মতাে যথেষ্ট উচ্চ শক্তি সম্পন্ন কণিকাত্বরণ যন্ত্র আমাদের নেই। যথেষ্ট শক্তিশালী ত্বরণযন্ত্র কয়েক বছরেই প্রস্তুত হবে। অধিকাংশ পদার্থবিদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, এ যন্ত্রে সালাম-উইনবার্গ তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণিত হবে ।
আরও পড়ুন,
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT
সালাম-উইন্বার্গ তত্ত্বের সাফল্যের ফলে শুরু হয় সবল পারস্পরিক ক্রিয়াগুলাে সম্পর্কে একই রকম একটা পুনঃপরিমিতিযােগ্য (Renormalizable) তত্ত্ব অনুসন্ধান। যথেষ্ট আগেই বােঝা গিয়েছিলাে প্রােট এবং পি-মেসনের (Pi-meson) মতাে অন্য হ্যাড্রগুলাে (hadron) সত্যিকারের মৌলকণা হতে পারে না। এরা নিশ্চয়ই কোয়ার্ক (Quark) নামক অন্য কণিকাগুলাের বদ্ধ অবস্থা। এদের একটা অদ্ভুত ধর্ম আছে।
Post a Comment