রাত দুইটা বেজে একত্রিশ মিনিট। সকাল নয়টায় আমার ফ্লাইট। আমি দেশে যাব। খুব ছােটবেলায় মির মােশারফ হােসেনের বিষাধ-সিন্ধু পড়ে খুব কেঁদেছিলাম। খুব অভিমান করেছিলাম সেদিন। মানুষের জীবনে কেন এত কষ্ট থাকবে। সেদিন আমি এসব মেনে নিতে পারিনি। আমার নিজের জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনিগুলাে থেকে আর একটা বিষাদ সিন্ধু রচনা হবে হয়তাে। কী অন্যায় করেছিলাম আমি? সবাইকে ভালাে রাখতে গিয়ে প্রবাসে এলাম। আর একের পর এক সব হারাতে থাকলাম।
না পাওয়ার গল্প - শেষ পর্ব |
একজন প্রবাসী এত সহজে কাঁদে না। প্রচণ্ড পরিমাণ মার খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকবে তবুও চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল বের করতে চায় না। আজ আমার চোখ দিয়ে শুধু জল নয়। রক্তও ঝরছে এই শেষ বেলায় নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। একজন প্রবাসীর কান্না দেখতে পারাটা ভাগ্যের ব্যাপার। প্রবাসীরা কাঁদে বিশ্বাস করুণ প্রবাসীরাই সব থেকে বেশি কাঁদে। কিন্তু মুখটা লুকিয়ে সবার চোখের আড়ালে গিয়ে যখন রাত গভীর হয় তখন চুপি চুপি কাঁদে। একজন প্রবাসীর বালিশটাই জানে মানুষটার ভিতরের যন্ত্রণা। একজন প্রবাসীর জীবনের হিসাব কষতে গেলে সেখানে শুধু হারানাে আর সেক্রিফাইজ ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না। জীবনের সব রংগুলাে হারাতে হয় প্রবাস জীবনে। হারাতে হয় প্রিয় স্বজনদের। যে স্বজনদের ছাড়া জীবন অকল্পনীয়।
যে স্বজনদের ভালাে রাখতে পাড়ি দেওয়া প্রবাস জীবনে। তাদের জন্যই জীবনের সব স্বাদ-আহ্লাদ, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় সব সেক্রিফাইজ করে দিতে হয়। একজন প্রবাসী সে নিতে শেখেনি। ঠিক আপনার উঠোনের সেই । গাছটার মতােই। আপনি মারুন-কাটুন আপনাকে জবাব দেবে না। সব কষ্ট নীরবে সয়ে নিয়ে একা কাঁদবে। এই কান্নার পিছনের কষ্ট অসীম। বােবা | সেই কান্না প্রবাসীদের চেয়েও ভালাে আর কেউ পারবে না। আপনাদের পরিবারের বা কোনাে আত্মীয়স্বজন প্রবাসে রয়েছে নিশ্চই। দয়া করে এদের কষ্ট দিয়েন না। এদের ঠকিয়েন না। এদের কষ্টগুলাে যদি আপনাকে দেখানাে যেত আপনি ঠিক থাকতে পারবেন না। একটু অনুভব করেন একটু সম্মান করেন আর একটু ভালােভাবে দুমিনিট এদের সাথে কথা বলুন। ব্যাস এটুকুই যথেষ্ট। বিশাস করুণ আপনার একটু সহানুভূতি পাওয়ার জন্য এরা ছটফট করে। ঠিক যেমন খাঁচায় থাকা পাখিগুলাে করে।
একজন আজমল সাহেবের জীবনে যা যা ঘটেছে তা যেন আর কোনাে প্রবাসীর জীবনে না ঘটে। আচ্ছা বলেন তাে আজমল সাহেব দেশে গিয়ে আর কী করবে? কী আছে আজমল সাহেবের জন্য। এত যন্ত্রণা আর কষ্ট নিয়ে আজমল সাহেব আর দেশে ফেরবে না। বাংলাদেশ এই যন্ত্রণা বহন করতে পারবে না। আমার রুমে আজ একটা বড় আয়ােজন করেছি। একটা ২ ফাঁসির ব্যবস্থা করে রেখেছি। এক এক করে সবাই তাে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমি তাে এদেরকে খুব ভালােবাসি। তাই আমিও আজ চলে যাব এদের কাছে। আচ্ছা মৃত্যুর পরও কি প্রবাসীরা এভাবেই প্রতিনিয়ত ঠকবে। আপনাদের সাজানাে এই সুখের পৃথিবী থেকে আমি চলে যাচ্ছি। আল্লাহ । হাফেজ।
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT
আমার এই মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমি স্ব-ইচ্ছায় এই পথ বেছে নিয়েছি। আমার এই সিদ্ধান্ত আমি নিজের ইচ্ছাতে সুস্থ মস্তিষ্কে নিয়েছি। আমার মৃত্যুর পর আমার লাশটা যেন আমার বাবা-মায়ের কবরের পাশে দেওয়া হয়। সেই অনুরােধ রইল।
আজমল সাহেব দেশে যাচ্ছে, তার প্রবাস জীবন চিরদিনের মতােই শেষ হয়েছে। সে যাচ্ছে লাশ হয়ে। এই পৃথিবী তাকে অনেক আয়ােজন করেই বিদায় দিয়েছে।
ভালাে থাক আজমল সাহেব, ভালাে থাক সকল প্রবাসী।
পরিবারের স্বচ্ছলতাসহ সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে, নিজ মনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে কাটাতে হয় প্রবাসীদের। হয়তাে একেই বলে এক ধরনের দেওয়ালবিহীন কারাগার।
“বেঁচে থাকলে রেমিটেন্স যােদ্ধা, আর মারা গেলে বােঝা।”
Post a Comment