আমার বাবা আনিসুর রাহমান। বাবা আজ অনেক খুশি। বাবার মতে আমি যেদিন এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলাম সেদিন যতটা খুশি হয়েছিলেন আজ তিনি ততটাই খুশি। কথাটা আমার মনগড়া নয়, এটা বাবার মুখ থেকেই শােনা। আমি বাবার একমাত্র ছেলে মাে. আমিনুল ইসলাম আয়ান। একজন শিক্ষিত বেকার। একটা চাকরি পাওয়ার সব ধরনের যােগ্যতাই আমার রয়েছে। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংলিশে অনার্স করেছি।
গল্পটা মিথ্যে নয় - প্রথম পর্ব |
আমার অ্যাডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড খুবই ভালাে। সব কয়টাতে ফাস্ট-ক্লাস রেজাল্ট। কিন্তু চাকরির বাজারে আমি ঠিক বিপরীত অবস্থানেই রয়েছি। এ পর্যন্ত আমি সতেরােটি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি। সব কয়টা পরীক্ষাতেই আমি খুব ভালােভাবেই পাশ করে গিয়েছি। আমার এই সতেরােটা চাকরিই কনফার্ম ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে সব পরীক্ষাতে পাশ করার পরও আরেকটা পরীক্ষাতে পাশ করতে হয়। কিন্তু সে পরীক্ষাটা আমার সিলেবাসের বাইরে ছিল। চাকরির এই বাজারে আমি যা বুঝলাম, তা হলাে পড়াশুনা কিংবা ভালাে রেজাল্ট চাকরির জন্য যথেষ্ট নয়। আসলে কোনােটাই খুব একটা ইফেক্টিভ না।
একটা জব পাওয়ার জন্য যে জিনিসটা সব থেকে বেশি প্রয়ােজন তা হলাে, টাকা এবং পরিচিত কোনাে ক্ষমতাশালী ব্যক্তির রেফারেন্স। আমার শুধু এই জিনিসটিরই বড্ড অভাব ছিল। আজ আমি বড় ক্লান্ত, আর পারছি । মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে একটা বন্দুক ঠেকিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ি, কিংবা নিজের জীবনের ইতি টানি। গল্প থেকে মনে হয় একটু দূরে সরে যাচ্ছিলাম। যাহােক, গল্পে ফিরে আসি।
আমার পরিবারে একবেলা খেলে আরেক বেলা খাবারের জন্য কিছুই থাকে না। আর আমার বাবা আজ দশ কেজি জিলাপি এনে মসজিদে বিতরণ করেছে। বাবার এই খুশির কারণটাই তাে বলা হলাে না। আমি চাকরি পেয়েছি। বড় একটা চাকরি পেয়েছি মাসে চল্লিশ হাজার টাকা বেতন। তাই আমার বাবা আর কার্পণ্য করেনি। এই তাে একটা মাস পরেই জিলাপির টাকা দোকানদারের মুখে ছুড়ে দিয়ে আসবে। দোকানদার ব্যাটা বাবাকে বাকি দিচ্ছিল না, যখন বলেছে তার ছেলের চাকরি হয়েছে, মাসে চল্লিশ হাজার টাকা বেতন, তখন আর না করেনি।
আরও পড়ুন,
যাই বলেন, আজ বাবাকে দেখে বােঝার উপায় নেই এই মানুষটা আজ প্রায় এক মাস ধরে বিছানা থেকে উঠতে পারে না। যখন শুনেছে আমার চাকরি হয়েছে। তখনই বাবা সুস্থ হয়ে গেছে। হা হা হা বাবার এই পাগলামি আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমি বাবার এই খুশিটা কখনাে ফিকে হতে দেব না। আজ বাবা সবাইকে ডেকে এনে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে আর বলছে, আমার আয়ান ঢাকা শহরে একটা বড় চাকরি পেয়েছে মাসে চল্লিশ হাজার টাকা বেতন। বাবার বুকটা যদি এখন আমি ফিতে দিয়ে মাপতে পারতাম তাহলে আমি নিশ্চিত বাবার বুক কমপক্ষে দুই ইঞ্চি বড় হয়ে গিয়েছে।
সবাই আজ অনেক খুশি। ছােট ভাইটা আবদার করছে ভাইয়া তুমি আমাকে প্রথম মাসের বেতন থেকে একটা সাইকেল কিনে দিবা। বাবা কথাও দিয়ে দিয়েছে। বলে দিয়েছে তাের ভাই বেতন পেলেই তাের জন্য একটা সুন্দর সাইকেল কিনে আনব। কী এক সুখ, আচ্ছা মৃত্যুর পরেই কি । জান্নাত পেতে হয়, কিন্তু আমি যে এখনি জান্নাতের সুখ অনুভব করছি। একটা বেকার ছেলে যখন চাকরি পায় তখন তার পরিবারের খুশিটা জান্নাতের থেকে এক অংশও নেহাত কম নয়। মা একটা টিভির আবদার করেছে। ছােট ভাই একটা সাইকেল, আর বাবার ইচ্ছে বেতন পেয়ে মিষ্টিওয়ালার গায়ে টাকা ছুড়ে মারা। হা হা হা কী এক অদ্ভুত আনন্দ!
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT
নতুন চাকরি পেয়েই পরিবারের সাথে সেলিব্রেট করতে এসে গেছি। আচ্ছা আপনাদের তাে বলাই হলাে না আমার নতুন চাকরিটা আসলে কী কি ভাবছেন বড় কোনাে কোম্পানির এমডি পদে, কিংবা বড় কোনাে অফিসার হয়ে গিয়েছি। শুনুন তাহলে একটা সত্যি কথা বলি, এতক্ষণ যা যা শুনলেন তা সবই আমার মিথ্যে অভিনয়। আদতে আমি কোনাে চাকরিই পাইনি। কে দেবে আমাকে চাকরি? আপনি দেবেন? জীবনেও দেবেন না, কারণ আমার কাছে টাকা কিংবা উচ্চমহলের কোনাে রেফারেন্স নেই। আমার বাবা একজন চাষা ছিলেন এখন তিনিও আমার মতােই বেকার। তার আর শক্তি নেই কোদাল হাতে মাটি খুঁড়তে। আমাদের জীবনটা আপনাদের মতাে এত কালারফুল রঙিন নয়। আমাদের সাদাকালাে জীবন।
Post a Comment