F স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - শেষ পর্ব

আমি আর কোনাে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। আপনারা অনেকেই পৃথিবীর সবথেকে কুৎসিত মানুষটাকে এতক্ষণ যাবৎ দেখছেন। আমি আজ অনেক দূরে ঠিক যেখানে বসে আজ লাইভ করছি— এটা এমন একটা জায়গা যেখানে জীবনের প্রথম আমি আমার বেঁচে থাকার শক্তি কিংবা ইচ্ছে হারিয়েছিলাম।


স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - শেষ পর্ব,ভালোবাসার গল্প,রোমান্টিক গল্প,কষ্টের গল্প,Fact Mohi
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - শেষ পর্ব



আমি আজ সেই জায়গায় যেখানে চারজন জানােয়ার আমাকে ধর্ষণ করেছিল। যেখানে আমার দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। সেদিন কেউ আমাকে বাঁচাতে পারেনি আজও পারবে না। ঠিক এখানেই এমন একটা মালবাহী ট্রেনের একটা অপ্রয়ােজনীয় বগি যেখানে চারজন মানুষের কাছে। তখন খুব প্রয়ােজন হয়ে উঠেছিলাম আমি না এখানে কেউ আসে না। এই বগিটা মনে হয় অপরাধের একটা আঁতুড়ঘর। স্টেশন থেকে খানিক দূরে এক নির্জন জায়গায় এই বর্গি পড়ে রয়েছে যেখানে আজ আমার জীবনের শেষ পরিণতি হবে । আজ আমি বগিটাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছি। শুধু মৃত্যুর বেলায় নিজেকেই সাজাতে পারলাম না ।




এখন বিকাল ৪টা বেজে ৩২ মিনিট আমি আজ আর আমার থাকার জায়গাটিতে ফিরে যেতে পারিনি। কী করে যাব আমার যে চুলগুলাে কেটে দিয়েছে মানুষ নামের জানােয়ারগুলাে। আমার শরীরে শক্তিও নেই, আমি একশ বেতের আঘাত সহ্য করতে পারিনি। খুব কষ্ট হয়েছে আমার। আজ আমাকে জুতাের মালা পরিয়ে সমস্ত এলাকা ঘুরিয়েছে। আপনাদের সবার মােবাইলেই বােধ হয় সেই ভিডিও এতক্ষণে পৌছে গেছে। আপনারা খুব মজাও পেয়েছেন। কেউ কেউ আবার বলেছেন জুতাের মালায় আপনার জুতােটাকেও জায়গা দিতে। আজ আমি চলে যাওয়ার পর আপনার সেই জুতােটা আমার গলায় পরিয়ে আমাকে শেষ বিদায় দিয়েন। একটিবার আপনারা এই হিজড়াটার অবস্থানটা জানার প্রয়ােজন মনে করলেন না।




আমার হাতে যা দেখছেন সেটা বিষ, খুবই বিষাক্ত বিষ। দুই বােতল কিনেছি। এটা বলতে বলতেই এক বােতল বিষ খাওয়া শেষ। আপনারা হাসছেন, এই পৃথিবী থেকে একটা আগাছা চলে যাচ্ছে। এক হিজড়ার বিদায় হচ্ছে।



একজন কমেন্টস করেছেন— এটা কি আসল বিষ না নকল? ভাই এটা সত্যিকারের বিষ।



আজ যখন ফার্মেসিতে গিয়ে বিষ চাইলাম তিনি খুব ভেবে আমাকে সব থেকে ভালাে এবং বিষাক্ত বিষ দিয়েছেন। আমি অবশ্যই মারা যাব। আজ পৃথিবীর অনেক মানুষ আমাকে দেখছে। আমার মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। আরও এক বােতল বিষ রয়েছে এই বলে আরেক বােতল খেয়ে ফেলল। মুখ থেকে প্রবল বেগে রক্ত বের হচ্ছে। আর যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল সে। আশেপাশে কেউ নেই। একজন লিখেছেন, হিজড়া মারা গেলে কি তার জানাজা কিংবা দাফন হয়? হিজড়াদের কোনাে জায়গা নেই এই দুনিয়াতে। আমার মা-কে এনে দেবেন একটু, মার মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। এই বলে গড়াগড়ি করে এক করুণ মৃত্যু দিয়ে স্বপ্নর স্বপ্ন হওয়া শেষ হলাে।




ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন



আচ্ছা হিজড়া মরলে কি মুসলমানের এই দোয়াটা বলা যাবে। সুশীল সমাজের শিক্ষিত মানুষগুলাে আবার এটা নিয়ে সালিশ বা বিচার কার্যের আয়ােজন করবে না তাে?


কিছু কথা :


হিজড়া শব্দটি এসেছে আরবি হিজরত বা হিজরি শব্দ থেকে, যার আভিধানিক অর্থ পরিবর্তন বা Migrate ev Transfer। এর ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে বিশেষ এক ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধীদের হিজড়া বলে। মূলত শারীরিক লিঙ্গের ত্রুটির কারণে এদের সৃষ্টি। এদের প্রধান সমস্যাগুলাে হলাে—এদের লিঙ্গ নারী বা পুরুষের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে না। কারাে কারাে ক্ষেত্রে দেখা যায় লিঙ্গ নির্ধারক অঙ্গও থাকে না। এসবের উপর নির্ভর করে তাদেরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। শারীরিকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নারী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিজড়াদের বলা হয় অকুয়া, অন্য হিজড়াদের বলা হয় জেনানা, আর মানুষের হাতে সৃষ্ট বা ক্যাসট্রেড পুরুষদের বলা হয় চিন্নি।


হিজড়া হওয়ার বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যা


দেখা যায় XX প্যাটার্ন ডিম্বাণুর সম্বয়ে কন্যা আর XY প্যাটার্ন থেকে জন্ম নেয় ছেলে শিশু। জ্বণের পূর্ণতার স্তরগুলােতে ক্রোমােজোম প্যাটার্নের প্রভাবে ছেলে শিশুর মধ্যে অন্ডকোষ আর কন্যা শিশুর মধ্যে ডিম্বকোষ থেকে এস্ট্রোজেন। এক্ষেত্রে জ্বণের বিকাশকালে নিষিক্তকরণ ও বিভাজনের ফলে বেশকিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের সৃষ্টি হয়। যেমন— XXY অথবা XYY। এর ফলে বিভিন্ন গঠনের হিজড়া শিশুর জন্ম হয়।



ইসলাম যা বলে :


হিজড়া জন্ম হওয়ার বিষয়ে ইসলাম ধর্মেও ব্যাখ্যা রয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, হিজড়ারা জিনদের সন্তান। কোনাে এক ব্যক্তি আব্বাস (রা.)-কে প্রশ্ন করেছিলেন, এটা কেমন করে হতে পারে। জবাবে তিনি 9 বলেছিলেন, আল্লাহ ও রসুল (সা.) নিষেধ করেছেন যে, মানুষ যেন তার স্ত্রীর মাসিক স্রাব চলাকালে যৌন সংগম না করে। সুতরাং কোনাে নারীর সঙ্গে তার ঋতুস্রাব হলে শয়তান তার আগে থাকে এবং সেই শয়তান দ্বারা ওই নারী গর্ভবতী হয় ফলে উক্ত নারী হিজড়া সন্তান প্রসব করে। অর্থাৎ মানুষ ও জিনের যৌথ মিলনজাত সন্তানকে ইসলামে বলা হয় “খুন্নাস”। [সূত্র : সূরা বনী ইস্রাইল-আর রাহমান-৫৪, ইবনে আবি হাতিম, হাকিম তিরমিজি।]



হিজড়া জন্মানাের পিছনে কোনাে পাপ কিংবা অন্যায় থাকে না। মহান আল্লাহর এই সৃষ্টির পিছনে হয়তাে কোনাে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। এই সমাজের সব থেকে অবহেলিত সম্প্রদায়টি হিজড়া। আমরা একজন হিজড়া দেখলে আমাদের শিশুর চোখ বন্ধ করে দেই। আচ্ছা যখন একজন হিজড়া এই দৃশ্যটি দেখতে পায় তখন তার বুকে কতটা কষ্ট জমা হয় তার হিসাবকি আপনি রাখেন? এরকম কতশত কষ্ট প্রতি মুহূর্তে আমরা এদের দিয়ে থাকি তার কোনাে হিসাব নেই। একটু সহানুভূতি কিংবা একটু হাসিমুখে কথা বলাটা কি খুব কঠিন আমাদের জন্য। আচ্ছা আমি, আপনি কি হিজড়া হয়ে জন্মাতে পারতাম না। যদি হতাম তাহলে এর পিছনে আমাদেরই বা কী করার থাকত? 

Post a Comment

Previous Post Next Post