F গল্পটা মিথ্যে নয় - তৃতীয় পর্ব

ঠিক করলাম একটা মেসে উঠতে হবে। পরদিন থেকেই একটা সস্তা মেসের সন্ধান করতে লাগলাম। পেয়েও গেলাম সাতশ টাকা ভাড়া দিতে হবে। আর আমাকে তাদের ডাইনিং স্পেসে থাকতে হবে। উঠে গেলাম কোনােভাবে। দুই দিন ধরে কিছু খাওয়া হয়নি। তবে মেসে উঠেই তাদের খাবার থেকে অল্প খেতে দিল আমাকে। এই মেসে আমি শুধু থাকার ভাড়াটা দেব। কারণ আমি মেসে খাবাে না। এই মেসে উঠার পর থেকে কয়েকদিন একটু খেতে পারছিলাম। এই যেমন বুয়া রান্না করে চলে যেত। আমি চুপি চুপি রান্নাঘরে প্রবেশ করে সবার খাবার থেকে অল্প অল্প চুরি করে খেয়ে নিতাম। পুরাতন সেই অভ্যেস বলে কথা।


গল্পটা মিথ্যে নয় - তৃতীয় পর্ব, গল্পটা মিথ্যে নয়,রোমান্টিক গল্প,ভালোবাসার গল্প,কষ্টের গল্প,বেদনার গল্প,জীবনের গল্প,Fact Mohi
গল্পটা মিথ্যে নয় - তৃতীয় পর্ব 



জীবনের অনেকটা সময় আমি খাবার চুরি করে খেয়েছি। এভাবে খাবার চুরি করতে থাকি আর সারাদিন বাইরে ঘুরে ঘুরে চাকরির সন্ধান করি। একটা চাকরিও পেয়ে যাই, কিন্তু এই চাকরিটা করতে গেলে আমার একটা সাইকেল থাকতে হবে। আমি আমার অবস্থান বুঝিয়ে বললাম, তখন অফিস থেকে আমাকে একটা সাইকেলের ব্যবস্থা করে দেয়। চাকরিটা হলাে সাইকেলে করে খাবার ডেলিভারি দেওয়া। বেতন ঘণ্টা হিসাব করে দিত। ফুটপাড়া নামক একটা প্রতিষ্ঠান শুনেছেন নিশ্চই। তখন থেকে আমি প্রায় রাত-দিন মানুষের খাবার ডেলিভারি দেওয়া শুরু করি। পিঠে দামি দামি খাবার নিয়ে ঘুরতাম কিন্তু নিজের পেট সবসময় খালি পড়ে থাকত।



একদিন ডেলিভারি দিয়ে বাসায় ফিরলাম। দেখি আমার কাঁথা-বালিশ সব বাইরে পড়ে আছে। আমার অপরাধ আমি প্রতিদিন তাদের খাবার চুরি করে খেয়ে ফেলি। এটা মেসের একজন দেখেছে। তাই আমাকে মেস থেকে বের করে দিয়েছে। আবার আমাকে ফুটপাতে অবস্থান করতে হলাে। | সেদিন রাত প্রায় বারােটার সময় বাবা আমাকে ফোন দিয়েছে। আর জিজ্ঞেস করেছে আয়ান আজ কী দিয়ে খেয়েছ? আমার উত্তর বাবা এই সপ্তাহে শুধু পােলাও, মাংস আর বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছে। আমার বাবা আমাকে ধমকের সুরে বলে, আয়ান বাবা এভাবে এত পােলাও মাংস খেলে তাে তােমার অসুখ হয়ে যাবে। তুমি সাদা ভাত খেয়াে। তুমি অফিসে বলে দিবা তােমার জন্য ভাত রান্না করতে। আমি বললাম জি বাবা কালকেই বলে দেব। চোখ দিয়ে পানি ঝরছে কিন্তু মুখে হাসি আর সাবলীল অভিনয় করে যাওয়া শুধু একজন শিক্ষিত বেকারের পক্ষেই করা সম্ভব। আমার অভিনয় বাবা ধরতেই পারেনি। সেদিন রাতে আবার ফুটপাতে থাকতে হলাে।



আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব 
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব 
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার 
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT


সকালে আবার অফিস থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ডেলিভারির উদ্দেশ্যে। আমি প্রায় আঠারাে ঘণ্টা ডেলিভারি দিতাম। আর ভালােই টাকা ইনকাম করতে থাকলাম। প্রথম মাসে প্রায় সতেরাে হাজার টাকা ইনকাম করলাম। আর সব টাকা আমার বাবকে পাঠিয়ে দিলাম। আমার বাবা যে কতটা খুশি হয়েছে তা লিখে প্রকাশ করার মতাে না। সেদিনই আমার বাবা ছােট ভাইকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছে। মায়ের জন্য দুইটা কাপড় কিনেছে। আর মিষ্টির দোকানদারকে টাকা ছুড়ে মেরেছে।



বাবা আমাদের গ্রামের সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে আসছে তার ছেলে আয়ান প্রথম চাকরির বেতন তার বাবাকে দিয়েছে। সন্ধে সাতটায় আমি ডেলিভারি দিচ্ছি তখন বাবা আমাকে ফোন দিয়ে কাঁদছে। আর কার জন্য কী কী কিনেছে সব আমাকে বলছে। আমি বললাম বাবা, তুমি যে কিছু নিলে না। তুমি কালকেই একটা পাঞ্জাবি আর একটা লুঙ্গি কিনবা। এই বলে আমি ফোন রেখে একটা বাসায় খাবার ডেলিভারি দিতে প্রবেশ করলাম। এটা একটা অফিস, অনেক বড় একটা অর্ডার ছিল। এ অফিসে একজন বাঙালি এবং বাকিরা সবাই ফরেনার ছিল। আমি ইংরেজিতে তাদের সাথে কথা বললাম। প্রায় দশ মিনিট কথা বললাম। তারা খুশি হয়ে আমাকে এক হাজার টাকা বকশিশ দিয়েছে। আর সেখানে যে বাঙালি লােকটা ছিল সে এসে আমার ফোন নম্বর নিল। বলল যদি কখনাে ফোন দেয় আমি যেন তার সাথে দেখা করি। আমি বললাম ঠিক আছে। এই বলে আমি আমার ফোন নম্বর দিয়ে চলে এলাম। এভাবে আরও সাতদিন পার হলাে। এর মধ্যে আমি কিন্তু ফুটপাতেই রাত কাটাচ্ছি।



ফুটপাতে থাকতে থাকতে আর একটা কাজের সন্ধান পেয়ে গেলাম রাতের বেলা ট্রাকগুলােয় মাল বােঝাই করে নিয়ে আসে। সেই মাল নামিয়ে যথাযথ স্থানে রাখলেই ঘণ্টায় একশ পঁচিশ টাকা করে দেবে। আমি সেই কাজ করতে লাগলাম। আল্লাহর রহমতে আমার বাবাও তখন প্রায় সুস্থ হতে লাগল। আমাকে প্রতিদিনই ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে আমি কী দিয়ে খেয়েছি আর আমি বলতাম পােলাও, মাংস, বিরিয়ানি, তেহারি আর বাবা আমার উপর রাগ করে ফোন রেখে দিত। আমি মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমাতাম । আর বাকি সময় কাজ করতাম। আমি আবার বেতন পেলাম এই মাসে সব মিলিয়ে প্রায় ছাব্বিশ হাজার টাকা ইনকাম করলাম। বাবাকে পঁচিশ হাজার টাকা পাঠালাম।



আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হতে লাগল। ছােট ভাইটাকে ভালাে জামা কিনে দিল। বাবা, মা সবাই খুব ভালােভাবে চলতে থাকল। এর মধ্যে হঠাৎ বাবা আমাকে ফোন দিয়ে কাঁদছে। বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করল তুমি কোথায়? আমি বললাম বাবা আমি তাে অফিসে কাজ করছি। হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছে। আমার পিঠে খাবারের ব্যাগ আর হাতে সাইকেল। বাবা কাদছে খুব কাঁদছে। আমি বাবার কছে গেলাম বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলেছে। হয়তাে ছেলের এই দৃশ্য বাবা মেনে নিতে পারছে না। বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কী করে এসেছ। জানলাম আমাদের এলাকার একজন আমাকে এক বাসায় খাবার ডেলিভারি দিতে দেখেছে আর সে আমার ছবিও তুলেছে। সেটা নিয়ে গ্রামের সব মানুষকে দেখিয়েছে। আমার বাবার মাথা নিচু করে দিয়েছে। তাই আমার বাবাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে আমার অফিস দেখাতে।


Post a Comment

Previous Post Next Post