একটা ছেলের যােগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যখন কোনাে জব পায় না তখন সে কী করবে ? যখন ছেলেটার মাথায় হাজারটা বােঝা থাকে। পরিবারের হাল ধরতে হবে। ছােট ভাইকে পড়াশােনা করাতে হবে। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে হবে। মা-কে ভালাে রাখতে হবে। এই অবস্থায় কী করা উচিত কেউ কি কখনাে একটা বেকার ছেলের জীবন চিন্তা করে দেখেছে। বাবাকে বিকেলের ট্রেনে উঠিয়ে দিলাম আর বাবাকে বললাম টেনশন না করতে। বলেছিলাম বাবা খুব শিগগিরই আমি একটা ভালাে চাকরি পেয়ে যাব। তুমি একদম টেনশন করাে না। আমার বাবার কষ্ট আমি বুঝতে পারছিলাম ।
গল্পটা মিথ্যে নয় - শেষ পর্ব |
বাবা যাওয়ার সময় একটা কথাও বলেনি। শুধু আমার দিকে তাকিয়ে কয়েক ফোঁটা চোখের জল ছেড়ে দিয়েছে। বাবা বাড়ি ফিরল। সেদিন নাকি খুব কাঁদল আমার বাবা। সারারাত আমার বাবা ঘুমায়নি। সকালে ঘুমিয়েছে কিন্তু সেই ঘুম আর বাবার কখনাে ভাঙেনি। এক বুক কষ্ট নিয়ে আমার বাবা এই পৃথিবী ত্যাগ করে চলে গেল। আমি সব ফেলে বাড়ি গিয়ে বাবার মুখটা দেখলাম। বাবাকে কত ডাকলাম বাবাকে বললাম, আমি বড় চাকরি পাব। কতভাবে বললাম কিন্তু আমি বাবার ঘুম আর ভাঙাতে পারলাম না। আমার বাবা যে এই পৃথিবীতে নেই। আমি কেমন ছেলে, সারাজীবন বাবা কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছে আর বাবাকে একটা চাকরি করে দেখাতে পারলাম না। বাবা আমি তাে চাকরি পেয়েছিলাম কিন্তু এই সমাজে যে চাকরি পেতে গেলে আরও অনেক কিছু লাগে।
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT
আমার বাবাকে নিজ হাতে কবর দিলাম। আর প্রতিজ্ঞা করলাম যে চাকরির জন্য আমার বাবা এক বুক কষ্ট নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। আমি আর কোনােদিন চাকরি করব না। প্রতিজ্ঞা করলাম অসহায় বেকার মানুষদের চাকরি দেব, চলে এলাম ঢাকায়। এর মধ্যে ডেলিভারি দিতে গিয়ে যে লােকটা আমার মােবাইল নম্বর নিয়েছিল সে আমাকে ফোন দিল। উনি আমাকে একটা কাজ দিল। কাজটা এমন বিদেশিদের কনভেন্স করা। আমি ভালাে ইংরেজি জানতাম। আমার কাজ হলাে আমি তাদেরকে কনভেন্স করে করে তাদের কাছ থেকে অর্ডার নেব।
এই লােকটির বাইং হাউজের ব্যবসায় ছিল। আমিও রাজি হলাম কারণ সে আমাকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে দেবে। এভাবে প্রতিদিনই তার সাথে যেতে হবে। আমাকে ভালাে কিছু পােশাক কিনে দিল কারণ ফরেনারদের সাথে কথা বলতে গেলে একটু পরিপাটি থাকতে হয়। প্রথম দিনেই আমি ফরেনারদের কনভেন্স করে দুই লক্ষ কাপড়ের অর্ডার পেয়ে যাই। আমার মালিকও আমার প্রতি তখন খুবই খুশি হয়ে যায় আর তখন আমার বর্তমান পরিস্থিতি কথা খুলে বললাম মালিককে সেদিনই একটা ফ্ল্যাট ঠিক করে দেয় আমাকে। এতদিন ফুটপাতে থেকে এখন ডাইরেক্ট একটা ফ্ল্যাট।
আমি ফুটপান্ডার সেই জবও ছেড়ে দিলাম। এখন থেকে তার বাইং হাউজ দেখাশােনা করতে লাগলাম। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাইং হাউজের ব্যবসায় বুঝে গেলাম, এবং একটা বাসা ভাড়া করে কিছু মেশিন বসিয়ে আমিও শুরু করলাম বাইং হাউজের ব্যবসা। কিছু অর্ডার নিতে থাকি। আর আমার ছােট্ট ফ্যাক্টরিটাকে আস্তে আস্তে বড় করতে থাকি। এক বছরের মাথায় আমি নিজে একটা বড় ফ্যাক্টরি দিয়ে ফেলি। যেহেতু বাইরের বায়ারদের আমিই হ্যান্ডেল করতাম তাই আমার অর্ডার পাওয়াটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। আমার মালিক যে ছিল সেও আমাকে সাহায্য করেছে। তার পর দিলাম গার্মেন্টস। এখন দেশের সব থেকে বড় গার্মেন্টস শিল্পটাই আমার। আর নাম দিলাম আমার বাবার নামে। “আনিস টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেড”।
আজ আমার দেশে-বিদেশে মিলে আঠারােটি গার্মেন্টস। প্রায় চল্লিশ হাজার শ্রমিক আজ আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। দেশের সব থেকে বড় গার্মেন্টস এখন আমার। লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবক হুমড়ি খেয়ে পড়ে আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য। আর আমার যােগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমি কোথাও জব করতে পারিনি। এখন মাঝে মাঝেই বাবার কবরের পাশে বসে থাকি। আর বাবাকে বলি তুমি চলে গেলে বাবা। একদিন তােমার ছেলে একটা চাকরির জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে আর আজ তােমার ছেলের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য মানুষ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
আজ তােমাকে খুব প্রয়ােজন ছিল আমার। তুমি গ্রামে প্রত্যেকটা ঘরে গিয়ে বুক টান করে বলতা আমার ছেলে দেশের সব থেকে বড় গার্মেন্টসএর মালিক। দেশের সব থেকে বড় কোম্পানিটির মালিক তােমার ছেলে বাবা। আজ তুমি বেঁচে থাকলে, না জানি কত কেজি জিলাপি মসজিদে বিতরণ করতে। খুব মিস করি বাবা তােমায়। তুমি চলে গেলে একটা অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে। বাবা তুমি কি আজ আমাকে দেখছ। একটিবার তুমি ফিরে আসাে না। আমি তােমাকে খুব ভালােবাসি বাবা। বেঁচে থাকতে তােমাকে মিথ্যে বলে কত সান্তনা দিয়েছি। আজ আর মিথ্যে নয়, আজ সবই সত্য। ভালাে থেকো বাবা তুমি।
যার মাঝে সীমাহীন উৎসাহ, বুদ্ধি ও একটানা কাজ করার গুণ থাকে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
Post a Comment