মা এগুলাে বইল না। আমি আসব কিছুদিন পরই। সব ঠিক হয়ে যাবে মা । আমরা ঢাকা চলে যাব । এই বলে ফোন রাখলাম। বিকেলে খবর এলাে আমার মা শাসকষ্টে মারা গিয়েছে। এটা আমি সহ্য করতে পারিনি। আমি খবরটা শুনেই ফিট হয়ে গিয়েছিলাম। পরপর চারবার আমার জ্ঞান ফিরেছে আর আমি জ্ঞান হারিয়েছি। আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমি এতিম হয়ে গেলাম। আমার দুনিয়াতে আর কিছুই রইল না। আল্লাহ আমাকে কেন এত কষ্ট একসাথে দিল। আমি আর সইতে পারছিলাম না।
না পাওয়ার গল্প - পঞ্চম পর্ব |
সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সুসাইড করব। সন্তানটার কথা চিন্তা করে পারলাম না। আমি মরে গেলে আমার সন্তানটার কী হবে। জাহান্নামের সব শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিয়ে যাচ্ছে। আমার বউ সবকিছু মিথ্যা প্রমাণ করতে চায় । আশেপাশের মানুষ ভালাে দেখতে পারে না। তাই নাকি আমাকে ফোন দিয়ে এসব মিথ্যা কথা বলে। তবুও আমি বলিনি তােমার করা নােংরামিগুলাে আমার কাছে রয়েছে। একজন প্রবাসীর জীবনের যন্ত্রণা কতটা তা কেবল প্রবাসে থাকা ব্যক্তিই বলতে পারবে।
দিনের পর দিন এভাবেই আমাদেরকে ঠকানাে হয়। ঠকানাে হয় নানা উপায়ে নানাভাবে। আমার ছেলেটার জন্য শপিং করতে শুরু করেছি আর মাত্র পাঁচ দিন আছে। তারপর আমার ছেলেটাকে আমি দেখতে পাব। একটু কোলে নিতে পারব। কত বড় হয়ে গেছে। রেখে এসেছিলাম কেবল সাত মাসের আর এখন বয়স ছয়। তারা আজ শহরে গিয়েছে। ছেলেটাকে শহরের একটা ভালাে স্কুলে ভর্তি করাব। আমার বউ আজ ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে শহরে নিয়ে গেছে।
আর আমি দেশে এসে বাসা ঠিক করে ফেলব । কিন্তু আজ অনেক্ষণ যাবৎ আমার বউয়ের নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। কী জানি হয়তাে চার্জ নেই। আমি আজ অনেক শপিং করেছি। দেশের টাকায় প্রায় চল্লিশ হাজার টাকার শপিং করেছি। একটু আনন্দ হচ্ছে। সারারাত এগুলাে কার্টুনে ভরে রেডি করব। তিন দিন ধরে কোনাে খোঁজ পাচ্ছি না তাদের। সেই যে শহরে গেল আমার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানাের জন্য এরপর থেকেই নম্বর বন্ধ। আমি সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। সবাইকে ফোন দিয়েছি। কেউ কিছু বলছে না। আগামী দিন আমার ফ্লাইট। আমি দেশে যাব।
হঠাৎ আমার নম্বরে একটা ফোন এলাে : হ্যালাে আমি এসআই রফিক বলছিলাম। আপনি কি সৌদি আরব থেকে আজমল সাহেব বলছেন?
আজমল : জি স্যার।
এসআই : আজমল সাহেব, মুক্তি নামের একজন মহিলা তিনি কি আপনার ওয়াইফ?
আজমল : জি স্যার। কিছু হয়েছে স্যার?
এসআই : আসলে আজমল সাহেব, আপনি প্রবাসী মানুষ। আপনার কষ্ট সাধারণ মানুষ অনুভব করতে পারবে না। যাহােক, আপনি মনটা একটু শক্ত করেন, আপনার জন্য একটা খারাপ খবর আছে।
আজমল : কেঁদে দিয়েছি আমি। নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলাম স্যার, কী হয়েছে? বলেন আমাকে দয়া করে।
এসআই : খানিক্ষণ চুপ করে থেকে। ভাই আপনার সন্তানের বয়স কত?
আজমল : ছয় বছর, আমার কলিজার টুকরা আমার আদর। ভাই আপনি দোয়া কইরেন আমি আমার ছেলেটাকে আপনার মতােই একজন এসআই বানাব। এইবারই ভাই স্কুলে ভর্তি করিয়েছি আপনাদের শহরে। আপনি দোয়া কইরেন ভাই।
এসআই : কাঁদতে লাগল।
আজমল : ভাই আপনি কাঁদছেন কেন?
আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT
এসআই : ভাই আপনার আদর আর এই পৃথিবীতে নেই। আপনার সন্তানকে আপনার স্ত্রী খুন করে ফেলেছে। উত্তরার একটা হােটেল থেকে আপনার ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। আপনার ছেলেকে জবাই করা হয়েছে। আপনার স্ত্রী এবং তার বয়ফ্রেন্ড রাইহান এই দুজন মিলে জবাই করে ফেলেছে। দুজনকেই আমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হােটেল থেকে আটক করেছি। খুন করে দুজনই পালিয়ে যেতে থাকলে হােটেলের স্টাফরা আটক করে আমাদের জানায়। আর ঘটনস্থল থেকে দুজনকেই আমরা আটক করি।
আজমল : জি চোখে কিছু দেখছি না। মনে মনে বললাম, আরেকটা মৃত্যুর অপেক্ষায় থাক এই পৃথিবী।
আমি হেরে গিয়েছি নিজের সাথে। আজ এই ঝলমলে রঙিন পৃথিবীটাকে কেমন জানি ফ্যাকাশে মনে হচ্ছে। জীবনে কোনােদিনও কিছু লিখতে পারিনি, তবে আজ মনে হচ্ছে আরেকটা বিষাদ-সিন্ধু রচনা হবে। আজ আমার জীবনের কিছু অর্থ খুঁজব। আমি জীবনকে কী দিয়েছি, আর কী ফেরত পেয়েছি তার একটা হিসাব কার জন্যই আজ আমার এত আয়ােজন।
Post a Comment