F না পাওয়ার গল্প - চতুর্থ পর্ব

আমার আর বুঝতে বাকি রইল না। ফোন রেখে দিলাম। সারা রাত কান্না করলাম। সকাল বেলা ডিউটিতে গেলাম। শরীরটা বড্ড খারাপ আমার। চোখে কিছু দেখছি না। খেজুর গাছে খেজুর পাড়তে উঠলাম। কিছুদূর উঠতেই মাথা ঘুরিয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। আমার হাত ভেঙে গিয়েছে। কোমরেও বেশ ব্যথা পেয়েছি। ডাক্তার অনেক ওষুধ দিয়েছে। ভাবছি সুস্থ হলেই বাড়ি যাব। আমার মালিক আমাকে তিন মাসের ছুটি দিয়েছে। বাড়িতে ফোন দিয়ে বললাম তিন মাস পর বাড়ি আসব। আমার বউ কেমন জানি একটু বিচলিত হলাে। 


না পাওয়ার গল্প - চতুর্থ পর্ব,না পাওয়ার গল্প,ভালোবাসার গল্প,কষ্টের গল্প,রোমান্টিক গল্প,জীবনের গল্প,Fact Mohi
না পাওয়ার গল্প - চতুর্থ পর্ব


আমাকে আরও একটা বছর থাকার অনুরােধ করছে। এই পাঁচ বছরে আমি যতবার বাড়ি আসতে চেয়েছি ততবার আমাকে আটকানাে হয়েছে। আরও কিছু টাকা ইনকাম করাে আরও কিছু টাকা ব্যাংকে রাখাে। ছেলেটার ভবিষ্যতের কথাটা ভাবাে ইত্যাদি। আমিও এসব চিন্তা করে কলুর বলদের মতাে করে খেটে যাচ্ছি। তবে হ্যা, প্রবাসে থেকে একটা প্রবাদ বেশ মনে পড়ছে “চোখের আড়ালেই মনের আড়াল একমাত্র মা-কে বাদ দিলে আর কাউকেই আপন লাগছে না। এ পৃথিবীর সবকিছুই নিষ্ঠুর। প্রবাসে থেকে বাবাকে হারিয়েছি। চোখের পলকে নিজের বউ-এর পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। হারিয়েছি নিজের দুইটা আঙুল আর পেয়েছি শত কষ্ট। 



সবগুলাে বুকে চাপা দিয়ে পড়ে রয়েছি। মায়ের শরীর দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিছু টাকা জমিয়েছি মায়ের জন্য। দেশে গিয়েই মাকে নিয়ে একটা বড় হাসপাতালে যাব। মাকে সুস্থ করে তুলব। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমালাম। পরদিন সকালে খুব ভােরে আমার ফোনে একটা কল এলাে বাংলাদেশ থেকে আসা একটি নম্বর। সচরাচর এমন হয় । কেউ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কল দেয় না। আবার ফোন বাজতে লাগল। আমি রিসিভ করলাম—


আজমল : আস্সালামু আলাইকুম। কে?


অপরিচিত : আপনি দশ লক্ষ টাকা সাত দিনের মধ্যে আমার অ্যাকাউন্টে সেন্ড করবেন। আমি আপনাকে আমার অ্যাকাউন্ট নম্বর সেন্ড করে দিয়েছি। আর কেন আপনি আমাকে টাকা দেবেন। তার জন্য দুটি ভিডিও আপনার মেসেঞ্জারে সেন্ড করে দিয়েছি দেখে নেবেন। আর যদি টাকা না পাঠান তাহলে এই ভিডিও দিয়ে ঠিকই আমরা টাকা তুলে নিতে পারব।


আজমল : ফোন কেটে গেল। মেসেঞ্জারে পরপর দুটি এসএমএস এলাে। আমি তৎক্ষণাত ঢুকলাম আর যা দেখলাম।



১ম ভিডিও : আমার বউ মুক্তি ইয়াবা সেবন করছে। সাথে আমার পাঁচ বছরের ছেলেটাকেও খাওয়াচ্ছে। আর কিছু লােকজনের সাথে অশ্লিলভাবে নাচানাচি করছে। 




২য় ভিডিও : আমার বন্ধু রাইহান, যে ছিল আমার ভাইয়ের মতাে। তার সাথে আমার বউ একই রুমে... আর এই ভিডিওটা আমার বন্ধু রাইহান নিজেই করেছে।



আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব 
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব

না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব 
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi




পৃথিবীতে কি এর থেকেও বেশি কষ্ট রয়েছে? জাহান্নামের কষ্টও এতটা তীব্র কি না তা আমার জানা নেই। আমি বাড়িতে ফোন দিলাম। বাচ্চাদের মতাে করে কাঁদতে থাকলাম। আর বললাম, কেন তুমি এমন হয়ে গেছ? কেন তুমি এমন করলা? আমি তােমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তুমি আমার ছেলেটার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিও না। আমি এসব কিছুই বললাম না। আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। 



আমি আর প্রবাসে থাকব না। আমি আমার পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব। ঠিক করলাম সব বিক্রি করে দিয়ে আমরা ঢাকায় চলে যাব। ছেলেটাকে একটা ভালাে স্কুলে ভর্তি করাব। আমার খুব শখ আমার ছেলেটাকে পুলিশের এসআই বানাব। আমার কষ্ট অনুভব করার মতাে শক্তি এই পৃথিবীর কারাে নেই। প্রবাস জীবন কতটা সুখী করেছে আমাকে তা বুঝতে পারলাম। আমার জীবন থেকে সব কেড়ে নিয়েছে।




অপরিচিত সেই নম্বর থেকে আবার ফোন এলাে, আমি  ভিক্ষা চাইলাম । আর আমি টাকা দিতেও রাজি হলাম। সব বিক্রি করে হলেও তা আমাকে করতে হবে। মা-কে ফোন দিলাম আর বললাম মা, তুমি থাকতেও কী করে এমন হলো । আমার মা কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল বাবা, আমি বাধা দিয়েছিলাম। তাই তাের বউ আমাকে ধরে অনেক মেরেছে। আমাকে কিছুদিন পরপরই মারে । বাবা আমি আর বাঁচব না। তুই আর আমাকে দেখতে পারবি না রে বাবা ।

Post a Comment

Previous Post Next Post