F স্বপ্ন থেকে স্বপ্না — দ্বিতীয় পর্ব

আমার পরিচয় কখনাে আমার পরিবার দিতে চাইত না। আমি তাহলে কে? কী আমার পরিচয়, আমার বাবা-মা, ভাই থেকেও ছিল না। 


স্বপ্ন থেকে স্বপ্না,স্বপ্ন থেকে স্বপ্না দ্বিতীয় পর্ব,নতুন গল্প,ভাইরাল গল্প,রোমান্টিক গল্প,Fact Mohi
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - দ্বিতীয় পর্ব
 


একদিন আমারি মতাে এক হিজড়া আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। আমি এই নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছি। তিনিই আমারই মা আমার সুস্মিতা মাসি। তখন আমার বয়স ষােলাে। আমি বড় হতে থাকি এক হিজড়া সম্প্রদায়ের কাছে। যেখানে সবাই আমার মতাে। মনে হয়েছিল জীবনের সবকিছু খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু জানেন আমাদের বেঁচে থাকার জন্য তাে আপনাদের মতাে শিক্ষিত, সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের কাছে যেতেই হতাে। আমরা আপনাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে টাকা তুলে সেই টাকা দিয়ে চালডাল কিনে কোনােভাবে বেঁচে থাকি। যখনি আপনাদের মতাে সুস্থ মানুষের কাছাকাছি রয়েছি তখনি মনে হয়েছে এটাই আমাদের জন্য নরক কিংবা জাহান্নাম।

আমি জীবনে প্রথমবার যেদিন সুস্মিতা মাসির সাথে আপনাদের কাছ থেকে টাকা তুলতে বের হয়েছি। জীবনের প্রথম যেন এত বড় জগত্তাকে এত কাছ থেকে দেখেছি। সবকিছুই কত সুন্দর সব সুন্দরের মাঝে কেবল একটাই কুৎসিত তা হলাে আমরা।


সবাই টাকা তুলতে যখন বাজারে বাজারে ঘুরছে। আমি তখন রেল স্টেশন দেখব বলে সুস্মিতা মাসিকে জানালাম। মাসিও আমাকে রসুলপুর স্টেশনে নিয়ে স্টেশনে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় অপেক্ষা করতে বলে মাসি টাকা তুলতে চলে গেল। আমি খুব অবাক হয়ে মানুষ দেখছিলাম ইসস কত্ত সুন্দর করে আল্লাহ আপনাদের বানিয়েছে। জানেন, সেদিনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম আপনাদের কে আল্লাহ শুধু একটা সুন্দর চেহারা দিয়েই বানিয়েছে। কিন্তু সুন্দর মন আপনাদের দেওয়া হয়নি। ।


তখন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে প্রচণ্ড রােদ, আমি ঘুরে ঘুরে আপনাদের জগৎটাকে দেখছিলাম হঠাৎ চারজন লােক আমাকে একটা মালবাহী ট্রেনের বগিতে উঠাল। এবং আমাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করল। আমি তাে একজন হিজড়া, তবুও আপনাদের মতাে সুস্থ মানুষের খাদ্যে পরিণত হলাম। আমার অবস্থা তখন মৃতপ্রায়। আমার সমস্ত শরীরটাকে ছিড়ে খেয়েছে, আমার দেহে রক্তের বন্যা বইতে লাগল। আমি চিল্কার করলাম কেউ এলাে না। আমি হিজড়া বলে কেউ আমাকে ছুঁয়েও দেখল না। আমি মালবাহী বগির মধ্যে উলঙ্গ অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে রয়েছি। অবশেষে বিকাল চারটায় আমাকে উদ্ধার করল সুস্মিতা মাসি। আমাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেও আমাকে কোনাে ডাক্তার চিকিৎসা দিল না। শুধু কয়েকটা ওষুধ লিখে দিল। তখন বুঝেছিলাম খােদার এই বিশাল জগতে আমাদের মতাে হিজড়াদের কোনাে জায়গা নেই। আপনাদের মতাে শিক্ষিত মানুষগুলাের কাছে একটা হিজড়াও রেহাই পায় না। তারপর থেকে কারণে-অকারণে আরও কতশত বার আপনাদের স্বীকার হয়েছি তার হিসাব নেই।




গত তিন দিন আগে সুস্মিতা মাসি ইন্তেকাল করেছে, কিন্তু জানেন আপনাদের এই সভ্য সমাজে শেষ আশ্রয়টুকুও পেল না। আমরা সুস্মিতা মাসির দাফনের জন্য কত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি কিন্তু আমরা হিজড়া বলে একটা জানাজার ব্যবস্থাও হলাে না। কেউ সাড়ে তিন হাত জায়গা দিল । সমাজে এতটা অবহেলিত আমরা, আচ্ছা আমরা হিজড়া হয়ে জন্মানাের পিছনে আমাদের অপরাধ কোথায়? আমাদের বেঁচে থাকার পিছনে এই সভ্য সমাজের লােকজন আমাদের জন্য কি কোনাে একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছে?



আমাদের কেউ চাকরি দেয় না। আমাদের স্কুলে পড়াতে চায় না, আমাদের সব জায়গার সর্বস্তরের মানুষ ঘৃণা করে। আমরা এই দুনিয়ার কোথাও একটু সহানুভূতিও পাই না। আমাদেরও তাে বেঁচে থাকার জন্য আপনাদের মতােই ডাল-ভাত খেতে হয়। হিজড়া বলে জীবনে কেউ কোনােদিন এক প্লেট ভাত দিল না। আমাদের ক্ষুধার জ্বালা কেউ বুঝতে চাইল না। যখন আমাদের আর কিছুই করার থাকে না, তখন আপনাদের কাছে হাত বাড়াই। কেউ মন থেকে আমাদের সাহায্য করতে চায় না। তখন আমাদের পেট বাঁচানাের জন্য কত উপায় অবলম্বন করতে হয় ।


আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব 
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব 
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার 
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT


আমরা আপনাদের কাছে একটা আতঙ্কের নাম। ছােট বাচ্চা থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত আমাদের দেখে ভয় পায়, আমাদের ঘৃণা করে। এই সমাজ আমাদের জন্য একটা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দেয়নি, কিন্তু আমাদের দোষ খুঁজতে পিছপা হয় না এই সুশীল সমাজ।

Post a Comment

Previous Post Next Post