F স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - তৃতীয় পর্ব

কাল সকাল দশটায় আমার বিচার । আপনাদের মতাে আমিও অপেক্ষায় আছি। কাল আমার শাস্তিটা দেখার জন্য। আমি স্কুলে না পড়তে পারলেও সুস্মিতা মাসির কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে টাকা উপার্জন করতে হবে, এমনকি, কী করে হাতে তালি দিয়ে কথা বলতে হবে। তিনিই আমার বাবা, তিনিই আমার মা। আমাদের সবার গুরুমা। আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা আমি মারা গেলে আমার ডাইরিটা কি আপনারা কেউ পড়বেন। আচ্ছা যদি পড়েই ফেলেন তাহলে আমার হাতের লেখা আর বানান নিয়ে হাসবেন না দয়া করে।


স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - তৃতীয় পর্ব, স্বপ্ন থেকে স্বপ্না,বাংলা গল্প,নতুন গল্প,Fact Mohi,রোমান্টিক গল্প,ভালোবাসার গল্প




আজ আমার শাস্তির রায় হয়েছে।


সকাল দশটায় গ্রামের সব গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসেছেন। গ্রামের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষ এসেছে আমার শাস্তিটা নিজ চোখে উপভােগ করতে।


বিচারকার্য শুরু হলাে :


চেয়ারম্যান : তাের সাহস তাে কম না, তুই আমার এলাকায় বাচ্চা চুরি করতে আইছস। তােরে আইজ খরম পিটা করব। জ্যান্ত মাটিতে পুঁইতা ফেলব। 



আমি : জি হুজুর। তাই করেন। অন্তত শেষ আশ্রয়টুকু তাে তাহলে পাব। 



চেয়ারম্যান। : তাের বাপ-মা কই? 



হিজড়া : হুজুর এখানেই আছে। অবশেষে আমার বাবা-মা-কে গ্রামের মানুষের জেরার মুখে পড়তে হলাে। এবং আমার প্রতি আমার বাবার বক্তব্যটাকে হুবহু তুলে ধরা হলাে।




বাবা : হুজুর এই কুলাঙ্গারটারে আমি জন্মের পরই মাইরা ফেলতে চাইছিলাম, কিন্তু হের মার লাইগ্যা পারি নাই। হেরে তাে আমি বাড়ি থাইক্কা বের কইরা দিছি অনেক আগেই। কিন্তু এই কুলাঙ্গারটা আমার আড়ালে এই গেরামে আইসা ঢুকে। এইডা আমার সন্তান না। এইডা জারজ সন্তান। এইডারে মাইরা গাঙ্গে ফালাইয়া দেন চেয়াম্যান সাব, তাইলে আমিও একটু শান্তি পাই। হের কারণে কোনাে জায়গায় মুখ দেহাইতে পারি না।




হিজড়া : আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মনে হচ্ছে বুকের ভিতরে কেউ ছুরি দিয়ে ভিতরের সমস্ত কিছুকে ছিড়ে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলছে। আমার জন্মদাতা বাপ আমাকে তার সন্তান বলে স্বীকার করে না। বড়ই আশ্চর্য এই দুনিয়া। আমি কোনাে কথা বলতে পারছি না।




চেয়ারম্যান। : তুই মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়া টেহা ছিনতাই করছ। মানুষরে ভয় দেহাস। তােগাে কারণে গেরামের মানুষগুলা শান্তিতে একটা অনুষ্ঠান করতে পারে না। বাচ্চা পােলাপাইনগুলা ইস্কুলে যাইতে পারে না। তােগাে কারণে বাস, ট্রেন, লঞ্চ এগুলাতে যাওয়া যায় না। তােরা মানুষরে বিপদে ফেলছ। তােরা চুরি, ছিনতাই সহ সব খারাপ কাম করছ। একটা নতুন বাচ্চা জন্মাইলে তােরা হেগাে বাড়ি গিয়া হামলা করছ। তােগাে কারণে আমরা অশান্তিতে আছি। তুই রহিমের সাত বছরের পুলাডারেও চুরি কইরা লইয়া গেছােস।




এহন আপনেরাই বলেন এর বিচার কী হওয়া উচিত?

একজন বইলা উঠল চেয়ারম্যান সাব এরে ধইরা জ্যান্ত মাটি চাপা দিয়া দেই। তাইলে আর আমাগাে গেরামে আইবাে না। আরেক জন বইলা উঠল এর চুলগুলা কাইট্টা দিয়া জুতা মাইরা গেরাম ছাড়া করি। একেক জনের একেক মত। মানুষ এতটা হিংস্র হতে পারে, তা আমি ভাবতেও পারিনি। হয়তাে আমি হিজড়া বলে।


আরও পড়ুন,
গল্পটা মিথ্যে নয় - সকল পর্ব 
সকল গল্প
মানুষ হতে পারিনি - সকল পর্ব
না পাওয়ার গল্প - সকল পর্ব
পথ শিশু শাওন - সকল পর্ব 
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় - সকল পর্ব
একজন হকার - সকল পর্ব
Fact Mohi
সকল চাকরির খবর
অফার 
স্বপ্ন থেকে স্বপ্না - সকল পর্ব
আমরা সুপার হিরাে নয় - সকল পর্ব
হাসমত মিয়ার জাতীয় পেশা - সকল পর্ব
Shuvo Academy
Shuvo Academy YT


সীদ্ধান্ত : মাথার সব চুল ঘেঁটে দিয়ে, গলায় জুততার মালা পরিয়ে, একশ বেত্রাঘাত করে গ্রাম থেকে বিদায় করা হবে।ব্যাস তাই হলাে, আমার মাথার সমস্ত চুল কেটে ফেলা হলাে, আমাকে দেখতে এখন এই পৃথিবীর সব থেকে কুৎসিত লাগছে। আমি নিজের দিকে একবার তাকিয়েছিলাম আর আল্লাহকে বললাম– বাহ কি তােমার খেলা! এক বুক কষ্ট নিয়ে গলায় জুতাের মালা পরলাম আর দাঁড়িয়ে থেকে একশ খানা বেতের বাড়ি খেয়ে গ্রাম থেকে বের হলাম। ফেরত দিয়ে দিলাম রহিমের সাত বছরের পােলা। আর লেখার শক্তি আমার নেই। তবে আপনাদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে। হয়তাে এই প্রশ্নগুলােই আমার জীবনের শেষ প্রশ্ন হবে। আজ আমার অনেক কাজ, আজ বিকেল চারটাই হয়তাে ফেসবুক লাইভে এসে প্রশ্নগুলাের উত্তর চাইব আপনাদের কাছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post