F স্টিফেন হকিং এর সংক্ষিপ্ত ইতিকথা - প্রথম পর্ব

আমার রচনা এই কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (A Brief History of Time) যে অভ্যর্থনা পেয়েছে তাতে আজো আমি খুবই বিস্মিত। নিউ ইয়র্ক টাইম্স্-এর সর্বাধিক বিক্রীত পুস্তকের তালিকায় বইটি ছিলাে সাঁইত্রিশ সপ্তাহ আর লন্ডনের সানডে টাইম্‌স-এর তালিকায় ছিলাে আঠাশ সপ্তাহ (বইটা ব্রিটেনে প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর)। এটা অনূদিত হচ্ছে কুড়িটি ভাষায়। (আমেরিকান ভাষাকে যদি ইংরেজি থেকে পৃথক চিন্তা করা যায় তাহলে একুশটি ভাষায়)।   

 

স্টিফেন হকিং এর সংক্ষিপ্ত ইতিকথা - প্রথম পর্ব


 

১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম যখন আমি সাধারণ মানুষের জন্যে মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটা বই লেখার কথা ভাবছিলাম তখন যা আশা করেছিলাম এ প্রাপ্তি তার চেয়ে অনেক বেশি। আমার উদ্দেশ্য ছিলাে মেয়ের স্কুলের বেতন দেওয়ার জন্যে টাকা সংগ্রহ করা (আসলে বইটা সত্যিই ছাপা হয়ে বের হলাে আমার মেয়ে তখন স্কুলের শেষ বছরে)। তবে মূল কারণ ছিলাে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বােধ কতাে দূর এগিয়েছে সে সম্পর্কে আমার নিজের বােধকে ব্যাখ্যা করার এক ইচ্ছে। অর্থাৎ আমরা কীভাবে মহাবিশ্ব এবং তার অবস্থা সম্পর্কে বিবরণ দেওয়ার মতাে একটা সম্পূর্ণ তত্ত্ব আবিষ্কারের নিটকতর হতে পারি।    

 

 

এর জন্য অবশ্য আমি চেয়েছিলাম, এ লেখার জন্যে যদি সময় ব্যয় করতে হয়, আর পরিশ্রম করতে হয়, তাহলে যতাে বেশি সম্ভব পাঠক পেতে। এর আগে লেখা আমার বৈজ্ঞানিক বইগুলাে প্রকাশ করেছিলেন কেব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। কাজটা ওরা ভালােই করেছিলেন কিন্তু যে রকম সাধারণ মানুষের বাজারে আমি প্রবেশ করতে চেয়েছিলাম সে বাজারে ঢােকার মতাে ব্যবস্থা তাদের ছিলাে বলে আমার মনে হয় নি।  সুতরাং আমি যােগাযােগ করলাম একজন সাহিত্য প্রতিনিধির (Literary Agent) সাথে। তার নাম আল জুকারুম্যান (AlZuckerman)। এক সহকর্মীর মাধ্যমে তার সাথে    

 

 

আমার পরিচয় হয়েছিলাে। সহকর্মীটি বলেছিলেন উনি ভদ্রলােকের ব্রাদার-ই-ল (শালা, ভগ্নীপতি, ভায়রা—এ রকম সম্পর্ক)। আমি ওই প্রথম অধ্যায়ের একটা খসড়া তালিকায় বলেছিলাম—আমি এমন বই করতে চাই যেটা বিমানবন্দরের বইয়ের স্টলে বিক্রি হবে । তিনি বললেন যে, এর কোনাে সম্ভাবনা নেই। বইটা ছাত্র কিংবা পণ্ডিতমহলে ভালােই বিক্রি হতে পারে। কিন্তু ঐ রকম একটা বই জেফ্রি আর্টারের (Jeffery Archer) কাছে যেতে পারবে না ।   বইয়ের প্রথম খসড়া আমি জুকাম্যান্‌কে দিয়েছিলাম ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। বইটা উনি কয়েকজন প্রকাশককে পাঠিয়েছিলেন। পরে আমাকে সুপারিশ করলেন নর্টন (Norton) কোম্পানির মতামত গ্রহণ করতে । কোম্পানিটা একটা উঠতি ভালাে আমেরিকান পুস্তক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তার বদলে আমি গ্রহণ করলাম ব্যান্টাম বুক্স (Bantam Books)-এর প্রস্তাব । যদিও ব্যান্টাম বিজ্ঞান বিষয়ক বই প্রকাশ করার বিশেষজ্ঞ হয় নি। তবুও তাদের বই বহু বিমানবন্দরের বইয়ের দোকানে পাওয়া যেতাে। তাদের অন্যন্য স্থানেও পরিচিতিও ছিলাে বেশ।   

 

 

আমাদের বইটা তাদের গ্রহণ করার কারণ বােধহয় ছিলাে পিটার গুজার্ডি (Peter Guzzardi) নামে তাদের একজন সম্পাদকের আমার বইটার প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ । কাজটা তিনি খুবই গুরুত্বের সাথেই গ্রহণ করেছিলেন। তার মতাে যারা অবৈজ্ঞানিক তারা যাতে পড়ে বুঝতে পারেন, সে রকম করার জন্যে তিনি আমাকে তাগিদ দিয়ে বইটি দ্বিতীয় বারে লিখিয়েছিলেন।  আমি যতাে বারই কোনাে অধ্যায় আবার নতুন করে লিখে তার কাছে পাঠিয়েছি ততাে বারই তিনি ফেরত পাঠিয়েছেন এবং সেই সাথে তার আপত্তির এক বিরাট তালিকাও পাঠিয়েছেন। আর পাঠিয়েছেন এমন কিছু প্রশ্ন যার উত্তর উনি আমার কাছ থেকেই চাইতেন। এক এক সময় মনে হয়েছে এ পদ্ধতি আর কোনাে দিন শেষ হবে না। কিন্তু কাজটা তিনি অবশ্যই ঠিকই করেছিলেন। এর ফলে বইটা অনেক ভালাে হয়েছে। বইটির মান বেড়েছে অনেক অনেক গুণে।  

 আরও পড়ুন,

 

ব্যান্টামের এই সুন্দর প্রস্তাব গ্রহণ করার সামান্য কয়েক দিন পর আমার নিউমােনিয়া হয়। আমার ট্রাকিওস্টমি (Tracheostomy) অপারেশন হয়। ফলে কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়। কিছু দিন পর্যন্ত আমার মনের ভাব প্রকাশ করার একমাত্র উপায় ছিলাে—কেউ কার্ডে অক্ষরে দেখালে জ্বটা উঁচু করা। সুতরাং বইটা শুরু করা সম্ভব হতাে না। কিন্তু সম্ভব হয়েছিলাে যে কম্পিউটার প্রােগ্রাম আমাকে করে দেওয়া হয়েছিলাে তার সাহায্যে।  কাজ হতাে একটু ধীরে ধীরে। কিন্তু তখন আমি চিন্তাও করি ধীরে। সুতরাং ব্যবস্থাটা আমার কাজের উপযুক্তই ছিলাে। গুজার্ডির তাড়ায় ওই যন্ত্রের যাহায্যে আমার প্রথম খসড়াটা প্রায় সম্পূর্ণই নতুন করে লিখলাম। নতুন করে এ লেখার কাজে আমি ব্রায়ান হুইট (Brian Whitt) নামে আমার একট ছাত্রের বেশ সাহায্য পেয়েছিলাম।

Post a Comment

Previous Post Next Post